সুদানে সংঘাত চলছেই, নিহত বেড়ে ১০০
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে এবং চলমান এই সংঘাত সুদানজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেনাবাহিনী এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে আধাসামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে।
সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০০ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ৪১ জন বেসামরিক নাগরিক। সোমবার (১৭ এপ্রিল) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছেন বলে সুদানের একটি ডাক্তার ইউনিয়ন বলেছে। আহতের আনুমানিক সংখ্যা ১১০০ বলেও জানিয়েছে তারা।
যুদ্ধরত উভয় পক্ষই রাজধানী খার্তুমের প্রধান প্রধান স্থাপনাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে। এর আগে রোববার আহতদের সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় উভয় পক্ষ। যদিও সেই যুদ্ধবিরতি ঠিক কতটা কঠোরভাবে মানা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলেছেন, খার্তুমের হাসপাতালের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। এছাড়া লড়াইয়ের ফলে আহত ব্যক্তিদের কাছে স্টাফ ও চিকিৎসা কর্মীদের পৌঁছানো এবং চিকিৎসা সেবা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
বার্তাসংস্থা এপি বলছে, সুদানের সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধাসামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই অব্যাহত রয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির জন্য কূটনৈতিক চাপ বাড়ালেও লড়াই বন্ধ করতে তারা রাজি নয় বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
সাঁজোয়া যান, ট্রাক-মাউন্ট করা মেশিনগান এবং যুদ্ধবিমান নিয়ে রাজধানী খার্তুম, সংলগ্ন শহর ওমদুরমান এবং সারা দেশের বেশিরভাগ স্থানে লড়াই চলছে। শুধু রাজধানীতেই প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এপি বলছে, রোববার সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিনে সুদানে কমপক্ষে ৪১ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এর ফলে গত দুই দিনের লড়াইয়ে মোট নিহতের সংখ্যা ৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে সোমবার সুদানের ডাক্তারদের সংগঠন জানিয়েছে।
এছাড়া গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া লড়াইয়ে আরও শত শত লোক আহত হয়েছেন বলেও গ্রুপটি বলেছে। চিকিৎসক দলটির মতে, চলমান লড়াইয়ে কয়েক ডজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার এবং সোমবারের প্রথম দিকে আরএসএফ রাজধানী খার্তুমের বেশ কয়েকটি স্থপানা দখল করার দাবি করেছে। এর ভেতরে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ও পার্শ্ববর্তী শহর ওমদুরমান রয়েছে এবং একইসঙ্গে দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর এবং উত্তরে অবস্থিত মেরোওয়ে বিমানবন্দরও রয়েছে।
অবশ্য কিছু বিবরণে সেনাবাহিনী বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ‘বিদ্রোহীদের ছোট অংশের’ মোকাবিলা করছে।
আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর আগেও রাজধানী খার্তুমের বিমানবন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছিল। তবে সেনাবাহিনী সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, সেনাবাহিনী আরএসএফ ঘাঁটিগুলোতে বিমান হামলা চালাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তারা অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে মনে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিল’-এর নামে দেশ পরিচালনা করছিলেন।
এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপরদিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।
বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
সেনাবাহিনী বলছ, আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা হবে। কিন্তু আরএসএফ বলছে এই একীভূতকরণের প্রক্রিয়া যেন অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফকে একীভূত করলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবে এ নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।