নাটোরের নন্দিত অভিনয় শিল্পী অনিতা পাল ১৯৬৩ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারী নাটোর শহরের নিচাবাজারে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশরকাল কাটিয়েছেন শহরের উপর বাজার মহল্লায়। নাটোরের প্রতিভাবান প্রতিমা শিল্পী তারা পালের ৭ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনি বড়।
মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে শুরু হয় অভিনয় জীবন। তিনি ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত অভিনয় করেছেন। সুদীর্ঘ ১৮ বছর অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় ১৫০টি নাটক ও যাত্রায় অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাকাম পরিবেশিত রবীন্দ্র নাট্য-শাপমোচন, চন্ডালিকা।
কাজী নজরুল ইসলামের মানসী নৃত্য নাট্যে মূলভুমিকায় অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। অভিনয় করেছেন দেশের সেরা অভিনেতা অভিনেত্রীর সাথে। প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাকের সাথে একই মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন ‘দুই মহল’ নাটকে।
নাটকটি মঞ্চায়িত হয়েছিল শহরের ছায়াবানি সিনামা হলে। তৎকালীন সময়ে হলটির নামছিল মিনার। আনোয়ার হোসেনের সাথে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা নাটকে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া টেলি সামাদ, রবিউল, আনোয়ারা, রাণী সরকারসহ দেশের জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের সাথে তিনি অভিনয় করেছেন।
দুইটি টেলিভিশন নাটকে তিনি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ সামছুল হকের গল্প অবলম্বনে বিপ্লব পালের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নাটক ‘জামগাছটা এখনো কাঁপছে’। মাসুদ রেজা পরিচালিত টিভি নাটক ‘ব্যাগ’এ অভিনয় করেন।
সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে তার খ্যাতি ছিল তৎকালীন সময়ে। সরকারী ও বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজিত অনুষ্ঠানের তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। ৫ বছর বয়স থেকে তার সঙ্গীত জীবন শুরু হয়েছিল।
বর্তমানে শিল্পী শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় প্রায় সময় অসুস্থ্য থাকেন। তার অভিনয় জীবনের প্রাপ্তি হিসেবে নাটোর জেলা শিল্পকলা একাডেমী থেকে পেয়েছেন সম্মাননা। নাটোরের অনেক সংগঠন তাকে দিয়েছেন সম্বর্ধনা।বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন বিশেষ সম্মান।
তিনি যখন অভিনয় জগতে আসেন, তৎকালীন সময় মহিলারা সামাজিকভাবে বাধাগ্রস্থ হতো। এই সামাজিক বাধা অতিক্রম করে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন তা প্রশংসার দাবীদার। নন্দিত এই অভিনয়শিল্পী সুস্থ শরীরে, দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে, এমনটাই প্রত্যাশা নাটোরের সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সকলের।