কিছু কথা নিজের কাছেই রাখতে হয়
একান্ত কিছু কথা যা শুধু নিজের, তাকে সযত্নে নিজের কাছেই রাখা উচিত। কিছু দুঃখ, কিছু মন খারাপ, কিছু ব্যথা, কিছু অপমান একেবারেই নিজের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে সযত্নে সাজিয়ে রাখেতে হয়। সব কথা সবাইকে বলতে নেই।
কিন্তু আমরা মানুষ, আর এই মানুষ হয়েই জন্মেছি যখন, তখন কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতেই হয়। নিজেদের সুখ দুঃখ, ভাল লাগা, খারাপ লাগা বিশ্বাস করে আমরা একে অপরের সাথে ভাগ করে নিয়ে থাকি। কেননা আমরা একলা বাঁচতে পারি না, সকলেই কাউকে না কাউকে খুঁজি নিজের মনের কথা বলার জন্য, নিজেকে হালকা করার জন্যে। কিন্তু এতে সত্যিই কি ভারমুক্ত হওয়া যায়? ভাল থাকা যায়? একটু চিন্তা করে দেখুন তো।
সময় পালটেছে, সময়ের সাথে সাথে সমাজের রূপও পালটে গেছে। জীবন অনেকটাই যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ, সততা, জীবন বোধ সবকিছুই পালটে গেছে। আজকাল সম্পর্কগুলোও অন্য রূপে ধরা দিচ্ছে। কাউকে বিশ্বাস করার মাঝে সেই স্বস্তি নেই, যেটা হয়তো আগে ছিল। আজকের মানুষ অনেক বেশি স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক। প্রতিনিয়ত বিষাক্ত প্রতিযোগিতা, পারিপার্শ্বিক বাতাবরণই হয়তো এর জন্যে দায়ী। সকলেই যেন আরেকজনের দোষ ত্রুটি আর দুর্বলতা খুঁজে বেড়ান, অন্যকে আঘাত করে আনন্দ পান। আর সেই কারণেই কারো সাথে নিজের গোপন কথা বিনিময় করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকাটা খুবই প্রয়োজন।
তাই একান্ত মনের ব্যথা বা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় অন্য একজনের কাছে তুলে ধরার আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে বা শান্ত মনে ভেবে দেখতে হবে ।
তাই এভাবেই ভেবে দেখুন না ———
প্রথমেই যেটা বলব, নিজের কথা নিজের কাছে রাখাই ভাল। চেষ্টা করতে হবে নিজের কাছেই নিজের কথা সযত্নে লালন করা। সেক্ষেত্রে মনকেই সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু করে নিলে কেমন হয়? একটু চেষ্টা করে দেখুন, ঠকবেন না কোনোদিনও।
দ্বিতীয়ত, যত আপন মানুষই হোক, সম্পর্ক কখনো না কখনো বদলে যেতেই পারে। কিন্তু নিজের সাথে সম্পর্ক কখনো ভাঙে না। মানুষ নিজের সাথে প্রতারণা করতে পারে না। তাই সম্ভব হলে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলো নিজের কাছেই রাখতে অভ্যাস করুন।
তৃতীয়ত, একান্ত যদি কাউকে বলতেই চান, তাহলে চিন্তা করুন খুব কাছের কাউকে। এমন কেউ কি আছে , চোখ বন্ধ করে যার মুখটা সবার আগে ভেসে উঠছে। যাকে চোখ বুজে সত্যিই ভরসা করা যায়। এমন কেউ সত্যিই কি কেউ আছে?
এছাড়া এমন কেউ, যিনি কখনো আপনার দুর্বলতা নিয়ে কারো কাছে গল্প করেন নি। কখনো সে আপনার দুর্বলতার সুযোগ নেন নি।
আরো একজনের কাছে বলা যেতেই পারে যে দুঃখ ও বিপদের দিনে আজীবন পাশে ছিলেন।
এছাড়া আর একশ্রেণীর মানুষ আছেন, কখনো আপনার প্রতি যার ভালোবাসায় কোন খাদ ছিল না। তাঁর ওপরে অনায়াসে আস্থা রাখতেই পারেন। কারণ বিপদেই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়।
ষষ্ঠত, সুখের দিনের বন্ধুরা অনেক আকর্ষণীয় সত্যি, কিন্তু এমন বন্ধুদের কখনো নিজের গোপন কথা বলবেন না ।
আরো একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন, যাকে বিশ্বাস করে নিজের গোপন কথা বলতে চলেছেন তিনি মানুষটা কেমন? আপনি ভাল করে আগে চিন্তা করে দেখুন তো তিনি কি অন্যের গোপন কথা এসে আপনাকে কোনোদিন বলেছেন?
তাহলে কিন্তু এই মানুষটি থেকে একটু সাবধানে থাকবেন। মনে রাখবেন, এই মানুষটি আপনার গোপন কথাও আরেকজনকে বলে বেড়াবেই। আর তাই , যত আপনই হোক না কেন এমন মানুষকে নিজের ব্যক্তিগত কথা কোনো মতেই শেয়ার করবেন না।
আবার এমন কাউকে নিজের গোপন কথা জানাবেন না, আপনার সাথে যার কোন না কোন স্বার্থ জড়িত। স্বার্থে কখনো আঘাত লাগলে তিনি যে সেই তথ্য আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন না, এমন কোন গ্যারান্টি কিন্তু নেই।
আর আপনার যদি মনে কোনো দ্বন্দ্ব থাকে মনের কথা বলার মতো কোনো বিশ্বস্ত কেউ নেই, বা কার কাছে বলি নিজের কথাগুলো বা তেমন কোনো মুখ যদি মনে না পড়ে তাহলে কি করবেন তাই তো?
একটু ভারমুক্ত লাগত কি কারো সাথে আলোচনা করলে? কিন্তু তেমন কাউকেই মনে আসছে না?
চিন্তা কি? এক্ষেত্রে কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা কোন কাউন্সিলারের কাছে পৌঁছে যান, আর তাঁর সাথে নিশ্চেন্তে নিজের মনের কথা শেয়ার করুন। তিনি পেশাদার মানুষ, তাঁর কাছ থেকে গোপন কথা কোথাও যাবে না।
পরিশেষে এই কথাগুলো কিন্তু বলতেই হয়, যেমন ধ্যান করুন, গান শুনুন, ভাল সিনেমা দেখুন। করেই দেখুন, তারপর নিজেই অবাক হবেন। হঠাৎই নিজেকে নিজেই আবিষ্কার করবেন, দেখবেন মনের যতো দুঃখ, মন খারাপ, কষ্ট বলে কিছুই নেই আপনার জীবনে। বরং হাসতে হাসতে মনকে বলুন জীবন একটাই, আর তাতে মন খারাপ থাকবে, দুঃখ থাকবে, যন্ত্রণা থাকবে। পাশাপাশি সুখ, আনন্দ, হাসি ঠাট্টা, মজাও থাকবে। আর এরই নাম জীবন …
(চলবে, পূর্ববর্তী পর্বগুলো পড়ার জন্য নীচের লিঙ্কগুলো দেখুন)