নাটোর শহরে উত্তর চৌকিরপাড়ে গড়ে উঠেছে পোষাক প্রস্তুতের কারখানা। উৎপাদন করা হচ্ছে শার্ট ও বাচ্চাদের প্যান্ট যা সরবরাহ হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। এতে করে সমৃদ্ধ হচ্ছে নাটোরের অর্থনীতি, তৈরি হয়েছে কর্মস্থান।
সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানায় বর্তমানে প্রায় ৭০জন শ্রমিক নিয়োজিত আছে। এখানে সৃষ্টি হতে পারে আরো কর্মস্থান, তবে প্রয়োজন বিনিয়োগ ও সরকারি সহযোগিতা।সরকারিভাবে কোনরকম সহযোগীতা না পাওয়ার অভিযোগ উদ্যোক্তার।
ইয়াছিন ব্যাপারীর কারখানা নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানে কারিগর মো. আসাদুল ইসলাম জানালেন, আমি প্রায় দশ বছর যাবত এই পোষাক শিল্পের সাথে জড়িত। বর্তমানে একটি শার্ট তৈরি করলে পাই ১৫ থেকে ২০ টাকা।
প্রতিদিন ৫০টা শার্ট তৈরি করা সম্ভব তবে ৫০টা শার্ট প্রতিদিন ভাগে পাই না। কাজ অনুয়ায়ী ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা আয় করতে পারি তাতে করে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা আয় হয়। এক ছেলের জনক মো. আসাদুল ইসলামের এই আয় থেকে তাদের তিন সদস্যের সংসার সচ্ছলভাবেই চলে।
কারখানার নারী শ্রমিক মোছা. মঞ্জুরা বেগম জানান, বছর পাঁচেক যাবত এই কাজের সাথে জড়িত। স্বামীর আয়ের সাথে আমার আয় জড়িত হয়ে সচ্ছলভাবেই আমার সংসার চলে। আমি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০টা শার্ট সেলাই করতে পারি, তবে ৪০টা শার্ট কোনদিন পাই কোনদিন পাই না।
গড়ে আমার আয় ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। একজন পুরুষ শ্রমিকের আয়ের তুলনায় আপনার আয় কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা সংসারের সকল কাজ সারা করি তারপর এই কাজে বসি তাই পুরুষ শ্রমিকদের থেকে আমরা সময় কম দিতে পারি ফলে আমাদের আয় কম।
কারখানার মালিক ইয়াছিন ব্যাপারী জানান, ১৯৮০ সাল থেকে আমি এই শিল্পের সাথে জড়িত। ৭০জন কারিগর বর্তমানে আমার কারখানায় আছে। তবে সবাইকে প্রতিদিন কাজ দিতে পারি না। গড়ে প্রতিদিন ৪৫জনকে কাজ দিতে পারি।
ব্যাংক ঋণের কিস্তি আর মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে অনেক সময় কাপড় কেনার টাকাই থাকে না। একটি শার্ট তৈরি করতে ব্যয় হয় ৮৫ টাকা থেকে ৯৫ টাকা। পাইকারদের কাছে যে দামে বিক্রি করি তাতে আমার ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা লাভ হয়।
শার্টগুলো ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বাজারে বিক্রি হয়। তিনি আরো বলেন, সরকার যদি এধরনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদ মুক্ত ঋণ দেয় তবে আরো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং এতে করে অধিক কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে তার মনে হয়।
নাটোরের নবাব সিরাজ উদ্-দৌলা সরকারি কলেজের অর্থনীতির বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. ফরহাদ হোসেন জানান, নিঃসন্দেহে এটা একটা ভাল উদ্যোগ। দেশের বিভিন্ন জেলায় যে পরিমাণ ক্ষুদ্র শিল্প আছে সে তুলনায় নাটোর জেলায় অনেক কম।
নাটোরে উদ্যোক্তা তৈরি করতে সরকারিভাবে বিবিধ পন্থায় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।ব্যক্তি উদ্যোগে এ ধরনের পোশাক তৈরির কারখানা আরো গড়ে উঠা দরকার। সাধরণত এই ধরণের অতি ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান সরকারের নজরে আসে না।
মশলা জাতীয় দ্রব্য উৎপাদনে সরকারিভাবে যেমন নূন্যতম চার পারসেন্ট সুদে ঋণ দেয়, তেমনিভাবে যদি এই ধরনের পোশাক প্রস্তুতকারক শিল্প খাতে কম সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে আরো বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এর ফলে নাটোরের অর্থনীতিতে বেশ ভাল প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে নাটোর বিসিকের উপব্যবস্থাপক দিলরুবা দীপ্ত’এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সাময়িকীর প্রতিবেদককে জানান, ক্ষুদ্র পোষাক তৈরীর কারখানা নাটোর জেলায় কতগুলো আছে তার কোনো পরিসংখ্যান বিসিকে নেই। পোশাক তৈরির ক্ষুদ্র কারখানা মালিকরা যদি বিসিকের সহযোগিতা চায় তবে সে ক্ষেত্রে করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে চার পারসেন্ট সুদে ঋণ দেওয়া হবে।
সাময়িকীর অনুসন্ধানে জানা যায় নাটোরের সিংড়া উপজেলা, বড়াইগ্রাম উপজেলা, গুরুদাসপুর উপজেলাসহ নাটোর সদরের বিভিন্ন স্হান জুড়ে, ইয়াসিন বেপারীর মতন প্রায় শতাধিক পোশাক তৈরির ক্ষুদ্র কারখানা রয়েছে, যার সঠিক পরিসংখ্যান খোদ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর কাছে নেই।
নাটোরের কারখানায় তৈরি পোশাক বর্তমানে জেলার চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। নাটোরে উদ্যোক্তা তৈরি করতে সরকারিভাবে বিবিধ পন্থায় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন এবং প্রণোদনার ঋণ পেতে কেউ হয়রানির শিকার না হয়, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী থাকবে, এমন প্রত্যাশা নাটোরের সচেতন মহলের।