বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) ক্ষেত্রগুলো ইতিহাসের শুরু থেকেই পুরুষপ্রধান ছিল। বিশেষ করে ১৮শ শতকের আলোকায়নের যুগ থেকে এই ক্ষেত্রগুলিতে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, তবুও STEM-এ লিঙ্গ বৈষম্য আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
ইতিহাসে STEM-এ নারীদের অংশগ্রহণ
বহু শতাব্দী ধরে নারীরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন, কিন্তু তাদের কাজকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সময়েও নারী গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের উল্লেখ পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ:
- হিপেশিয়া (Hypatia) – চতুর্থ শতকের একজন গ্রীক গণিতবিদ ও দার্শনিক।
- মেরি অ্যানিং (Mary Anning) – ১৯শ শতকে জীবাশ্মবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা একজন নারী বিজ্ঞানী।
- এডা লাভলেস (Ada Lovelace) – আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সীমিত ছিল।
লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ
STEM ক্ষেত্রে নারীদের কম অংশগ্রহণের পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে:
- সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা – অনেক দেশে নারীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
- শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য – ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষায় বেশি উৎসাহিত করা হয়, যা মেয়েদের STEM-এ আগ্রহ কমিয়ে দেয়।
- কর্মক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব – গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম সুযোগ পান এবং তাদের দক্ষতা কম মূল্যায়ন করা হয়।
- মজুরি বৈষম্য – STEM ক্ষেত্রে কর্মরত পুরুষদের তুলনায় নারীরা সাধারণত কম বেতন পান।
আধুনিক যুগে STEM-এ নারীদের অগ্রগতি
১৯৭০-এর দশক থেকে STEM ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে শুরু করেছে। আজ কিছু ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে বায়োটেকনোলজি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে।
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি:
- কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে
- মহাকাশ গবেষণায় নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ (নাসা-তে অনেক নারী বিজ্ঞানী কাজ করছেন)
- নারীদের STEM শিক্ষায় উৎসাহিত করতে বিভিন্ন স্কলারশিপ ও সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে
STEM-এ নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উপায়
- শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা – ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় উৎসাহিত করা।
- মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করা – সফল নারী বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরা।
- বৈষম্য কমানোর জন্য আইনগত পদক্ষেপ – কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে কড়া আইন প্রয়োগ করা।
নারীরা STEM ক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিভা ও দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে নারীদের STEM শিক্ষায় ও কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ দিতে হবে।