একাকিত্ব, ধোয়া তুলসীপাতা, বাকি কথা এবং অন‍্যান‍্য কবিতা

শংকর ব্রহ্ম
শংকর ব্রহ্ম
8 মিনিটে পড়ুন
চিত্র: সাময়িকী

১. একাকিত্ব

কেমন একলা হয়ে যাচ্ছি দিন দুপুরে
                                যে রকম একা হয়ে গেলে
নিজেকে ছাড়া আর সব কিছুকেই
                              মনে হয় একান্ত আপন
চারপাশে মেঘলা দুপুর
যতদূর চোখ যায় সবখানে বন্ধু হাওয়া ঘোরে
তবুও কোথায়ও যাওয়ার
                         কোন তাড়া নেই আমার
যেন সব কাজ সাঙ্গ করে বসে আছি বারান্দায়
পা ছড়িয়ে একটু বিশ্রামের আশায়
এমন সময় ঈশ্বর এলেন আমার কাছে
বললেন “বড্ড একা রে,একটু সঙ্গ দিবি”
                         তাকে আমি কি বলি এখন
বুঝলাম সঙ্গ সুখ ছাড়া ঈশ্বরও বাঁচে না
                        আর আমি তো কোন ছাড়


২. ধোয়া তুলসীপাতা

আমরা যে সব কামদেবের সাঙাৎ
দাঁড়িয়ে থাকি সন্ধ্যা থেকে রাত
দেখলেই পুরুষেরা হয়ে যায় কাৎ
ধনী গরীব সবাই যে চায় সঙ্গ সাথ

ক্ষুধার জ্বালা খুব কষ্ট দেয় বলে
সন্ধ্যা হলেই সব পথে আসি চলে
এসে কেবল গতরটাই বেচতে হয়
তাতে যে নেই আর কোন সংশয়

তবে তোমরা যারা মেধা বেচে খাও
তারা যে কেন আর কৈফিয়ত চাও
বল আমাদের তবে ঘৃণা কর কেন
তোমরা সব ধোয়া তুলসীপাতা যেন

- বিজ্ঞাপন -

৩. বাকি কথা

রমণী সান্নিধ্য পেলে
            পুরুষেরা উজ্জীবিত হয়
এ কথা সত্য জানি মিথ্যে কিছু নয়
এখানেই রয়ে গেছে গোপন সংশয়
               কেন হয় কতখানি হয়
সেই ভয় ধীরে ধীরে বিস্তরিত হয়
শাখা প্রশাখার মতো
             আর যত দুশ্চিন্তা বলয়
গড়ে ওঠে চারপাশে তার
ছায়া ফেলে জীবনে সবার
    তাতে আরও মায়া বেড়ে যায়
রমণীর প্রতি
                  এ কথা সত্যি অতি

এখানেই শেষ করি তবে
     আর যেই কথা আছে বাকি
          রমণীরও তাই হয় নাকি


৪. ফেসবুক সঙ্গী

টুকটাক বাইরের কাজকর্ম সেরে
ঢুকে পড়ি আমি টুক করে ফেসবুকের ভিতরে
আনন্দে কেটে যায় তাকে নিয়ে সারাদিন ধরে

এই করেই যে কাটছে আমার অনেক বছর ধরে
হেডমাষ্টারি থেকে ষাট বছরে অবসর নেওয়ার পরে

এখানে কত সুজন সখা এখানে কত সাথী
কালকে যাকে চিনতামও না বন্ধু রাতারাতি
কেউ আসে কেউ ফিরেও যায় থাকে না চিরকাল
বলতে পার এই সময়ে এটাই যুগের রীতি হাল

- বিজ্ঞাপন -

তাই ভাবি না আর ও সব নিয়ে যে থাকে তাকে রাখি
মনে থাকে না তাদের কথা যায় যারা বাদ বাদ বাকি


৫. বায়না

ক.

দূরে দূরে থাকি বলে কাছে যাওয়া হয় না
কাছে গেলে ডাকি তারে প্রিয় সুরে ময়না
দূরে দূরে থাকা তার মোটেও যে সয় না
মনে মনে ডাকে সে ‘কাছে চলে আয় না’

ডাকলেই কাছে তার চলে যাওয়া যায় না
ছড়িয়েছে যেই ব্যাধি দেশে দেশে চায়না
কাছে দূরে ওৎ পেতে আছে যত হায়না
তাহাদের দেখা বুঝি যমরাজ পায় না

- বিজ্ঞাপন -

খ.

এমন কি আছে কেউ ভালবাসা চায় না
অনেকেই চায় জানি সকলে তা পায় না

ভালবাসা কেড়ে নিতে ছুটে আসে হায়না
কিছুতেই তবু যে তা কেড়ে নেওয়া যায় না
খুন করা যায় প্রেম কেড়ে নেওয়া যায় না
আগে ভাগে করে তা দাও সকলেই বায়না

ভাগ যোগ করে প্রেম দেয়া নেয়া যায় না
ভালবাসা ঠিকঠাক মেপে নেওয়া যায় না
আবার তা কখনোই মেপে দেওয়া যায় না
বল তবে সবে আজ কে কে দেবে বায়না


একাকিত্ব, ধোয়া তুলসীপাতা, বাকি কথা এবং অন‍্যান‍্য কবিতা
চিত্র: সাময়িকী

৬. ফেলনা

কিছুই ফেলনা নয় কারোর জীবনে
যদি সে তাতে খুঁজে পায় মানে
আর না বুঝলে মানে তবে
সব কিছুই ফেলনা মনে হবে

এই ধর একটি ঝিনুক যদি
উঠে আসে ধীবরের জালে
সে কি তাহলে মুক্ত খুঁজে পাবে
বরং উঠে এলে বড় কোন মীন
    সে তার মানে খুঁজে পাবে

যদি তার খুঁজে পাও মানে
কিছুই ফেলনা নয় তোমার জীবনে


৭. প্রতিচ্ছবি

সারাদিন বৃষ্টি পাত
        সারা রাত
         তোমার মুখের রেখা
                       ভিজে যায় জলে
তবুও অস্পষ্ট কিছু
                 জেগে থাকে
                          উদাসীন ভাবে

ডালিম দানার মত
       দাঁতের গোপন ধার
                 কামড়ে ধরে
                          বুকের গভীরে

সারা রাত বৃষ্টিপাত সারা দিন
তোমার মুখের ক্ষীণ প্রতিচ্ছবি
  জেগে থাকে আমার ভিতরে


৮. ঋণ

                    বহু প্রাপ্তি এখনও ঘটেনি
ভূ্বনের কাছে রয়ে গেছে কত ঋণ
এই ভাবে চোখের দৃষ্টি থেকে
শরীরের শক্তি ধীরে হয়ে আসে ক্ষীণ

তোমার শরীরে জমে মেদ
যখন আমিষ গন্ধে জ্যোৎস্না ছড়ায় স্বেদ
শুধুই কি অকারণ নাকি কোন ভয়
তা যে আজ স্বপ্ন মনে হয় জাগে বিস্ময়

এই ভাবে বৃক্ষের বয়স বাড়ে
                  বয়স বাড়ে এই পৃথিবীর
দিন দিন তোমার আমার প্রেম
                                 হয়ে আসে ক্ষীণ
বহু ঋণ রয়ে গেছে তোমার মতন
                 আরও অনেকের কাছে
বহু প্রাপ্তি অকারণে দূরে সরে গেছে


৯. পুতুল

আমরা যেন এখন সব কথা বলা পুতুল
কেউ শুনতে না চাইলেও
                  আনমনে বকবক করে যাই
আর শুনতে চাইলে তো আর কথাই নাই
মনের ভিতরের কথা কিংবা ব্যথাগুলো
যাই বল না কেন,যেন তা উগরে দিতে চাই

নিরুপায় মানুষ আমরা,বিষাদ যন্ত্রণা ভুলে
কিছুদিন বাঁচার আনন্দে বেঁচে থাকতে চাই


১০. মহান্ত

বন্ধুর সাথে সেদিন বাজারে দেখা
বন্ধু হঠাৎ বলল আমায় ডেকে
তুমি নাকি বড় মহান্ত হয়ে গেছ
শুনে আমি মৃদু হাসি
মহান্ত শব্দটা শুধু মোহান্ধ করে রাখে

মহান্ত সম্বন্ধে কোন ধারণাই নেই
এ কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই জেনো
মহান্ত কথাটা কি নিন্দা সূচক
নাকি সেটা স্তুতি বাক্য কোন

মহান্ত নামের এক ডাক্তারকে জানি
ছোটবেলা যিনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন
তাহলে কি মহান্ত খুব নিন্দিনীয় নয়

এই সব ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরি আমি
মহান্ত নামক জীব ফেরে একই সাথে

খেতে বসে মহান্ত খাবার খায়
                               আমি চেয়ে দেখি
খাটে শুয়ে মহান্ত ঘুমিয়ে পড়ে
                                আমি জেগে থাকি
এই ভাবে হতে থাকে
                      ক্রমাগত দিন প্রতিদিন
কবে যেন একদিন অজান্তেই
                     আমিই  মহান্ত হয়ে যাই


১১. আমি

লোকটা আমি মোটেই খুব মন্দ নই
ভালবাসার কাছে গেলে পাই না থই
কেমন যেন অকারণে বিভ্রান্ত হই
লোকটা আমি মোটেই তেমন মন্দ নই

লোকটা আমি মোটেও তেমন ভাল নই
হিংসা দ্বেষের কথায় খুবই ক্ষুব্ধ হই
বুকের ভিতর ফুটতে থাকে জ্বালার খই
লোকটি আমি মোটেও তেমন ভাল নই

লোকটি আমি মোটেও তেমন মন্দ নই
ভালবাসা কাছে এলে পাই না থই


১২. সাম্প্রতিক কবিতা

                 কেউ যদি এসে বলে
তোমার কোন দায় নেই
এই পৃথিবী ধ্বংসের জন্য
সমস্ত ভার
                 সরিয়ে নেওয়া হলো
তোমার মাথা থেকে
তুমি পাখি কিংবা শিশুদের মতো
আনন্দে খেলা কর

কবিরা মেতে উঠল লেখায়
           যেন কত মজার খেলা

তারা ভুলে গেল
সাম্প্রতিক কবিতা মানে
             প্রাণ বায়ুর জন্য যুদ্ধ

✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
শংকর ব্রহ্ম - ১৯৫১ সালের ২রা মার্চ, কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের শুরু থেকেই তিনি কাব্য চর্চায় মেতেছেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। প্রায় শতাধিক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখেন। কবি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে “সারা বাংলা কবি সন্মেলন” (১৯৭৮)-য়ে প্রথম পুরস্কার, “সময়ানুগ” (১৯৭৯)-য়ে প্রথম পুরস্কার, "যুব উৎসব” (১৯৮০)-এর পুরস্কার এবং অন্যান্য আরও বহু পুরস্কার। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “তোমাকে যে দুঃখ দেয়”, “স্মৃতি তুমি আমাকে ফেরাও”, “যাব বলে এখানে আসিনি”, “আবার বছর কুড়ি পরে”। এ'ছাড়াও কবির আরও দশটি “ই-বুক” প্রকাশিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!