১. চৈতন্য
হোস্টেলে ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে পরে
আমাদের চৈতন্য উন্মেষ হয়
তার আগে নয়,
প্রথমে আত্মহত্যা বলে
তাকে চালানোর চেষ্টা হয়
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে
সাপ বেরিয়ে পড়ে,
তা দেখে জনগণের মধ্যে
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে
তড়িঘড়ি একটা ব্যবস্থা নিয়ে
ধামা চাপা দিয়ে
সাময়িকভাবে দায় সামলানো হয়।
নার্স হোস্টেলে নার্সের
কিংবা হাসপাতালে জুনিয়ার ডাক্তারের
অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে পরে
আমাদের চৈতন্য উন্মেষ হয়
তার আগে নয়,
প্রথমে আত্মহত্যা বলে
তাকে চালানোর চেষ্টা হয়
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে
সাপ বেরিয়ে পড়ে,
তা দেখে জনগণের মধ্যে
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে
তড়িঘড়ি একটা ব্যবস্থা নিয়ে
ধামা চাপা দিয়ে
সাময়িকভাবে দায় সামলানো হয়।
এইভাবে ঘটনা ঘটে যাবার পরে
আমাদের চৈতন্য উন্মেষ হয়
তার কিছুদিন পর
আবার চৈতন্য সব লোপ পেয়ে যায়।
২. গণগর্জন
এইভাবে সমবেতভাবে গর্জে ওঠা যায়
কেউ কোনদিন দেখেনি,
স্বাধীনতা পূর্ব রাতে করে দেখালো নারী
তোমরাই তো অসুরদলনী।
দূর্গাকে মৃন্ময়ী দেখেছি
কখনও চিন্ময়ীরূপে দেখিনি
তোমাদের সকলকে দুর্গারূপী দেখে আজ
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি।
তোমাদের আহ্বানে ছুটে গেছি পথে
আমিও যে আছি তোমাদের শপথে।
৩. লজ্জা
মুখোশ পরা শিয়ালগুলি
হুকহা হুয়া ছাড়ছে ডাক,
না শুনে জনগণের দাবী
দল নিয়ে ওরা মত্ত থাক।
আমরা ওদের ধার ধারি না
নিজেদের কথা বলব আজ,
না শুনতে চায় কান ঢাকা দিক
ভুলে সকল লজ্জা লাজ।
নির্বাচনের সময় এলে
আমাদের ধার ওরাই ধারে
সমস্ত কাজে রেখে ফেলে
ভোটের সময় আসে ঘরে।
তারপরে সব ভুলে যায়
জনগণেরই লজ্জা হায়৷!
তাই সবাই ফুঁসে উঠে
অপরাধের বিচার চায়।
৪. বিদ্রূপ
স্বাধীনতা শব্দটার মানে আসলে কি?
আমরা যে আজও তা বুঝতে পারি নি।
তাই মনে হয় স্বাধীনতাটা কার তোমার আমার
নাকি যাদের ক্ষমতা আছে শুধুমাত্র তার?
স্বাধীনতার সঙ্গে আমাদের নেই কোন লেনা-দেনা
আমরা কারও গোলাম নই নয় যে কারও কেনা।
সাতাসত্তর বছর পরেও আমাদের পেটে নেই খাদ্য
স্বাধীনতার পতাকা তুলতে আমরা কেন বাধ্য?
পকেট থাকে আমাদের সর্বদাই খালি
বাবুরা পতাকা তোলে আমরা বিদ্রূপে বাজাই তালি।
৫. মন ভাল নেই
এমন সময় কবির কি আর মনটা ভাল থাকে?
অসভ্যতার মুখোশ যখন সভ্যতাকে ঢাকে।
অসুস্থ দিন ফুরিয়ে যায় তবুও সুস্থতা ফেরে না
কবির মনে কষ্ট বাড়ে, বাড়ে ব্যথার আনাগোনা।
রাত্রি ফুরায় যে দিন আসে রাতের চেযে কালো
এর চেয়ে ছিল আদিম যুগের অন্ধকারই ভাল
অনেকে যখন স্বার্থ লোভে মুখোশে মুখ ঢাকে
তখন বল কি করে কবি মুখটি বুঁজে থাকে
আর তার মনটা ভাল রাখে?
৬. নীতিবোধ
নীতিবোধ ব্যাপারটা,আসলে খুব গোলমেলে
যদি কেউ সারাদিন
আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে থাকতে চায়,
আমার আপত্তি হবে কেন?
কিংবা কেউ যদি তার সোহাগী বৌকে,
অন্যের গলায় ঝুলিয়ে দিতে চায়
আমার কি বলার থাকতে পারে ?
কেবল আমার গলায় না দিলেই হল।
কোন সুন্দরীর দিকে,যদি কেউ তাকিয়ে থেকে
চোখ ব্যথা করে ফেলে,
তা’তে আমার কি ?
শুধুমাত্র আমার প্রেমিকার দিকে
ওভাবে কেউ না তাকালেই হল।
কিন্তু কেউ যদি নিরন্ন মূর্খ জনগনকে
ফুটবল ভেবে ক্রমাগত লাথি মেরে মেরে,
সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়,
তাহলে আমার আপত্তি ভীষণ
কারণ,আমি যে তাদেরই একজন।
৭. শিকল ছেঁড়ার ডাক
এখনও রয়েছো যারা বোবা হয়ে
শুধু কি নীরবেই দেখে যাবে সব
খুন ধর্ষণ শোষণ পীড়ন?
অন্তত কিছুটা তো প্রতিবাদ হোক
কলরবে ফেটে পড় সব
ছোটখাটো একটা বিস্ফোরণের শব্দ
এলোমেলো হয়ে যাক
পৃথিবীর খানিকটা দূষিত সময়
বদ রক্ত দূরীভুত হোক
এখন কোথাও যাব না আমি আর
শুধু পরিশুদ্ধ মন নিয়ে স্নান সেরে
পাখিদের কাছে গিয়ে শিখে নেব
শিকল ছিঁড়ে ওড়ার নিয়ম
তোমরা কি সঙ্গে যাবে?
ওগো সব নর-নারী এসো তবে দ্রুত।
৮. তিলোত্তমা
‘কলকাতা একদিন তিলোত্তমা হবে’
স্বপ্ন দেখছিল প্রিয় জীবনানন্দ কবি,
ভাগ্যিস দেখতে হয়নি তাকে তবে
কলকাতার এমন নির্মমতার ছবি।
খুন ও ধর্ষণে কলকাতা হয়েছে তিলোত্তমা
মনে প্রাণে অপরাধীদের শাস্তি চাই আজ,
এইসব কবছে যারা তাদেব করো না ক্ষমা
তিলোত্তমাকে খুন ও ধর্ষণ যাদের কাজ।
কলকাতার ভয়াল রূপ দেখেনি যে আগে
এইকথা বলছে সমস্বরে পৃথিবীর সবাই,
তাই আজ বুক আমার ফেটে যায় রাগে
এমন নির্মম অপরাধের কোনও ক্ষমা নাই।
৯. বিনীত আবেদন
ভাতা পাওয়া বুদ্ধিজীবী
কোথায় আছ সব?
দেশে যা আজ ঘটছে
সেটা করছ অনুভব?
ভাতাজীবী বুদ্ধিজীবী
সব অন্ধ কালা হয়ে,
দেশে যা সব ঘটছে
দেখবে না তা চেয়ে?
ভাতায় লোভে চোখটি বুজে
মুখটি বুজে থেকে,
দলদাস করবে প্রমাণ
সব কিছু আজ দেখে?
বিবেক কোথায় হারিয়ে গেছে
খোঁজ করে তা দেখ
দু’এক ছত্র সুবিচার চেয়ে
আজকে না হয় লেখ।
১০. নক্ষত্ররা
সমস্ত উজ্জ্বল নক্ষত্র আজ ঝুঁকে পড়েছে
পৃথিবীর বুকে
ঝাঁকে ঝাঁকে মোমবাতি জ্বলছে বাংলার দিকে দিকে
এ দৃশ্য বস্তুত বিরল
এমন দৃশ্য দেখে নক্ষত্ররা ভাবে
তারা কি সংকেত দিচ্ছে কিছু আমাদের
এই ভেবে আলোচনায় বসে তারা
ধ্রুবতারা শুনে বলে
নিশ্চয় বাংলায় আঁধার নেমেছে ঘন
তারা তাই এর থেকে পরিত্রাণ চায়
আমরা কি করতে পারি তার জন্য?
আমরাও নেমে বাংলায়
তাদের পাশে গিয়ে পারি তো দাঁড়াতে?
এদেশের নক্ষত্ররা পাশে এসে দাঁড়াবেন সবাই?
১১. অশৌচ
শোকের অশৌচ আজ
আমাদের ঘরে ঘরে,
পুজায় মাতব আমরা
বলো দেখি কি করে?
দুর্গাকে মেরে আজ
উৎসব হবে কার
কাটমানি খেয়ে যারা
গড়েছে স্বর্ণ-পাহাড়?
উৎ-শবে ফেরা চাই
গৃধিনী মুখে বলে তাই,
কান কাটা সরকার
কী বা আর দরকার?
১২. বিচার চাই
ধর্ষণের বিচার চাই বিচার চাই
ধ্বনি বাজে আকাশে বাতাসে
মেয়েদের রাত দখলের ডাকে
জনগণ দাঁড়ায় এসে পাশে।
আমাদের ভয় ভাঙাল অভয়া
ভেঙে দিল যেন ঘুম জড়তা
সংক্রমিত সাহসে ভরে করে
জেগে ওঠে সব আমজনতা।
এই নরকভূমিতে আর নয় বাস
এবার দেশকে স্বর্গ গড়তে হবে,
ধর্ষক খুনিদের কঠিন শাস্তি দিলে
তবে অভয়ার সঠিক বিচার হবে।
✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!