বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে ঘিরে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে সপরিবারে দেশ ত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ তিনি ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
পদত্যাগের ঘোষণা আসার পর হাজার হাজার মানুষ গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে। সেখানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।
সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, অনতিবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়া হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটক সকল বন্দীদের মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তারা আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করবেন এবং তাদের সমর্থিত প্রস্তাবিত ছাড়া অন্য কোনো সরকারকে সমর্থন করবেন না।
বাংলাদেশে ১৭ দিন ধরে চলা কারফিউ মঙ্গলবার ভোর থেকে তুলে নেয়া হবে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। মঙ্গলবার থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা খুলে দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা দিল্লির কাছে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করার পর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তার সঙ্গে দেখা করেছেন বলে ভারতের নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে। শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না জানিয়ে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, “আমার মনে হয়, তার এখানেই শেষ। আমার পরিবার এবং আমি – আমাদের যথেষ্ট হয়েছে।”
ঢাকায় আওয়ামী লীগের একাধিক কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন থানায় হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, স্থাপনা ও গাড়িতে হামলার তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত থাকার এবং সংঘাত পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সোমবারও ঢাকা, যশোর ও বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অন্তত ৪৪ জন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে।