মুক্তাঞ্চল, একাকিত্ব এবং অন্যান্য কবিতা

শংকর ব্রহ্ম
শংকর ব্রহ্ম
6 মিনিটে পড়ুন
ছবি: সাময়িকী

মুক্তাঞ্চল

কবিতাকে আমি মুক্তাঞ্চলে নিয়ে যেতে চাই

তাকেও চেনাতে চাই পথঘাট 

অন্ধগলি বেশ্যালয় শুঁড়িখানা চোঁয়া ঢেকুরের স্বাদ

পৃথিবীর গোপন আস্থানা আঁস্তাকুঁড় গৃহস্থের ঘর

- বিজ্ঞাপন -

সবকিছু তাকে আজ চিনে নিতে হবে

জেনে নিতে হবে সেই বাঁচার নিয়ম

বুঝে নিতে হবে তাকে শরীর ও মননের ভাজে ভাজে

কোথায় কি আছে আর কোথায় কি নেই

বাতসে কতটা ঘ্রাণ বারুদের

- বিজ্ঞাপন -

বাতাসে কতটা স্বাদ সোহাগের

দুপুরের নির্জন গন্ধ 

কোন রমণীর বুকের ভিতরে রয়ে গেছে কিনা

- বিজ্ঞাপন -

কবিতাকে সেই সব জেনে নিতে হবে

আজকাল কবিতাকে বুঝে নিতে হবে 

কার বুকে কতখানি প্রেম 

আর কার বুকে কতখানি দীর্ঘশ্বাস জমা হয়ে আছে

একাকিত্ব

কেমন একলা হয়ে যাচ্ছি দিন দুপুরে

                                যে রকম একা হয়ে গেলে

নিজেকে ছাড়া আর সব কিছুকেই 

                                  মনে হয় একান্ত আপন

চারপাশে মেঘলা দুপুর

যতদূর চোখ যায় সবখানে বন্ধু হাওয়া ঘোরে

তবুও কোথায়ও যাওয়ার 

                             কোন তাড়া নেই আমার

যেন সব কাজ সাঙ্গ করে বসে আছি বারান্দায় 

পা ছড়িয়ে একটু বিশ্রামের আশায়

এমন সময় ঈশ্বর এলেন আমার কাছে

বললেন “বড্ড একা রে একটু সঙ্গ দিবি”

                             তাকে আমি কি বলি এখন

বুঝলাম সঙ্গ সুখ ছাড়া ঈশ্বরও বাঁচে না

                            আর আমি তো কোন ছাড় 

দু’মুঠো ভাত

বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না

                              বলব কি আর মুখে

বুকের ভিতর অনেক জ্বালা

                           নেই তো মোটেই সুখে

বিজয়  বিজয় করছ বন্ধু

                                     বিজয় মানে কি

আজও দেখ মুখে সবার

                                        অন্ন জোটেনি

আজও দেখ কত মানুষ

                                 এক কাপড়ে হাঁটে

সারা জীবন কত লোকের

                               ভিটে ছাড়াই কাটে

একেই যদি বিজয় ভাব

                                বলার কিছুই নাই

বিজয় মানে সবার মুখে

                                 দু মুঠো ভাত চাই

দুঃখ আমার

কেউ জানে না দুঃখ আমার

দুটো বোতাম হারিয়ে গেছে শীতের জামার

একটা বোতাম হারিয়ে গেছে বাসের ভিড়ে

অন্যটা কে নিল ছিঁড়ে টের পাইনি

তোমার কাছে তাই যাইনি আজ সন্ধ্যায়

সেই কারণে মনের ভিতর ঢুকেছে ভয়

কি জানি কি ভাববে তুমি

সে কথা জানে অন্তর্যামী

সেই দুঃখও আমার কাছে মোটে কম নয়

কেউ জানে না দুঃখ আমার

তোমার সাথে কবে হবে দেখা আবার

ফেসবুক সঙ্গী

টুকটাক বাইরের কাজকর্ম সেরে

ঢুকে পড়ি আমি টুক করে ফেসবুকের ভিতরে

আনন্দে কেটে যায় তাকে নিয়ে সারাদিন ধরে

এই করেই যে কাটছে আমার অনেক বছর ধরে

হেডমাষ্টারি থেকে ষাট বছরে অবসর নেওয়ার পরে

এখানে কত সুজন সখা এখানে কত সাথী 

কালকে যাকে চিনতামও না বন্ধু রাতারাতি

কেউ আসে কেউ ফিরেও যায় থাকে না চিরকাল

বলতে পার এই সময়ে এটাই যুগের রীতি হাল

তাই ভাবি না আর ও সব নিয়ে যে থাকে তাকে রাখি

মনে থাকে না তাদের কথা যায় যারা বাদ বাদ বাকি

ভয়

মাঝে মাঝে খুব একা হয়ে যাই

মনেহয় কেউ আমার নয় আমি নয় কারও 

বুকের ভিতর ফাঁকা লাগে আরও

নিঃস্ব মনে হয়

সমস্ত বিশ্বটা যেন গ্রাস করে গিলে খেতে আসে

শুধু রাত্রি আমাকে ভালবেসে গভীর আশ্বাসে

বুকের ভিতরে টেনে নেয়

কিন্ত তা আর কতটা সময়

আবার তো দিন আসে

সেই নিগূঢ় একাকিত্বের শুরু হয় ভয়

প্রেমের মৃত্যু

এই জন্যই এই বয়সে একজন সঙ্গী দরকার

যে বলে দেবে গেঞ্জিটা উল্টো করে পরেছো

               ছি ছি প্যন্টের চেনটা উপরে টানো

তা না হলে আর বল সঙ্গীর কিবা দরকার

এই বয়সে একজন সঙ্গী প্রয়োজন

                             মাঝে মাঝে বলে ওঠে মন

ভালবাসা যদি ভুল ঠিকানায় ভেসে যেতে চায়

তবে বল হায় কি আছে উপায়

তবে কি তাকে আমি  ফিরাব না ঘরে

       তাই ভাবি যদি প্রেম যাবে অনায়াসে মরে

ইচ্ছে করে

আসবে তুমি এই না ভেবে ছিলাম আজও অপেক্ষায়

দরজা খুলে তাকিয়ে দেখি হঠাৎ তুমি বারান্দায়

আনন্দে মন নাচতে থাকে এখন আমি কি করি

ইচ্ছে করে আদর করে বুকের ভিতর চেপে ধরি

কষ্ট তুমি অনেক দিলে কিন্ত হঠাৎ কাছে এলে

এরপরে আর কি বলি তুমি আমার প্রিয় বলে

ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে আদর করে বেশ করি

ইচ্ছে করে তোমায় ধরে আচড়ে কামড়ে শেষ করি

বাকি কথা

রমণী সান্নিধ্য পেলে 

                পুরুষেরা উজ্জীবিত হয়

এ কথা সত্য জানি মিথ্যে কিছু নয়

এখানেই রয়ে গেছে গোপন সংশয়

                   কেন হয় কতখানি হয়

সেই ভয় ধীরে ধীরে বিস্তরিত হয়

শাখা প্রশাখার মতো

                 আর যত দুশ্চিন্তা বলয়

গড়ে ওঠে চারপাশে তার

ছায়া ফেলে জীবনে সবার

        তাতে আরও মায়া বেড়ে যায়

রমণীর প্রতি

                      এ কথা সত্যি অতি

এখানেই শেষ করি তবে 

         আর যেই কথা আছে বাকি

              রমণীরও তাই হয় নাকি

সংস্কার           

করণীয় কাজ হল না কিছুই করা

ভুলে ভুলে ফুল উঠল না ফুটে গাছে

কাছে ছিল যারা তারা আজ অনেকেই কাছে নেই

তবু আছে যারা  নিজেরাই তারা অসহায় দিশেহারা

শেষ বেলা এসে    মনে পড়ে শেষে

কত নোনা জল ঢুকে  

                            জীবনের স্বাদ নোনতা করেছে 

যাবে একদিন সব কিছু চুকেবুকে

জীবনে ফেরার ডাক দিলে যদি

সংস্কার কর আবর্জনায় রুদ্ধ গতিহীন যত নদি

ধোয়া তুলসীপাতা

আমরা যে সব কামদেবের সাঙাৎ

দাঁড়িয়ে থাকি সন্ধ্যা থেকে রাত

দেখলেই পুরুষেরা হয়ে যায় কাৎ

ধনী গরীব সবাই যে চায় সঙ্গ সাথ

ক্ষুধার জ্বালা খুব কষ্ট দেয় বলে

সন্ধ্যা হলেই সব পথে আসি চলে

এসে কেবল গতরটাই বেচতে হয়

তাতে যে নেই আর কোন সংশয়

তবে তোমরা যারা মেধা বেচে খাও

তারা যে কেন আর কৈফিয়ত চাও

বল আমাদের তবে ঘৃণা কর কেন

তোমরা সব ধোয়া তুলসীপাতা যেন

প্রান্তবেলায়

অমূল্য এই জীবনটা যে ফুরিয়ে গেল হেলায় ফেলায়

এখন আমি বিভোর হয়ে ব্যস্ত আছি শব্দ খেলায়

জানি এরও মূল্য কিছু নাই জীবনে

তাই তো আমি একলা থাকি আপন মনে

বন্ধুরা সব মত্ত হয়ে মাতায় আসর

দেখি আমি মুগ্ধ চোখে স্তব্ধ কিশোর

একলা মনে আপন জনে ভুলে যে তার

পথে পথে ঘুরে বেড়ায় আপনি বিভোর

জীবন কেমন ফুরিয়ে যায় হেলায় ফেলায়

এখন কিশোর পৌঢ় বটে প্রান্তবেলায়

✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
শংকর ব্রহ্ম - ১৯৫১ সালের ২রা মার্চ, কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের শুরু থেকেই তিনি কাব্য চর্চায় মেতেছেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। প্রায় শতাধিক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখেন। কবি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে “সারা বাংলা কবি সন্মেলন” (১৯৭৮)-য়ে প্রথম পুরস্কার, “সময়ানুগ” (১৯৭৯)-য়ে প্রথম পুরস্কার, "যুব উৎসব” (১৯৮০)-এর পুরস্কার এবং অন্যান্য আরও বহু পুরস্কার। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “তোমাকে যে দুঃখ দেয়”, “স্মৃতি তুমি আমাকে ফেরাও”, “যাব বলে এখানে আসিনি”, “আবার বছর কুড়ি পরে”। এ'ছাড়াও কবির আরও দশটি “ই-বুক” প্রকাশিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!