আশিস নন্দী। কলকাতা বিশ্বিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে পাস। আই. সি. ডব্লিউ. এ. পড়ছে। এ বছর পুরোপুরি এটাও পাস করে যাবে। কারণ আগের রেজাল্ট খুবই ভাল। আশা লন্ডনে জব করবে।
পড়ার-ঘর ভরা কমার্স-বই। মার্কশিট। ক্যারেকটার-সার্টিফিকেট। একমাত্র ছেলে ও বাবা ও মায়ের।
সাইনাস হল। সার্জারি হল। পড়া চলছে। কয়েক মাস পরে নার্ভের রোগ হল। ঘাড় বেঁকে গেল। মুখ দিয়ে লাল ঝরতেই থাকল। ডান হাতটা কাঁপতে লাগলো। বয়স পঁচিশ।
চিকিৎসা করিয়ে ভালো হল। কিন্তু সারা জীবন ওষুধ সেবন করতেই হবে। আর লেখাপড়া করা যাবে না। ও ব্যাবসা শুরু করল। খুব লাভ হল। অনেক রোজগার করল। মা ও বাবাকে সমস্ত সুখ দিল।
মা ও বাবা পাত্রী খুঁজতে চেষ্টা করল। ছেলে বলল, “বিয়ে করব না। পাত্রী দেখো না। আমি এরকমই থাকব।” অনেক বুঝিয়েও পুত্রকে রাজি করাতে পারল না। এভাবেই তিন জনে দিন কাটায়।
থার্ড জুন, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে মা ও বাবার পূজো-ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলল। বয়স ত্রিশ। মায়ের বয়স পঞ্চাশ। বাবার পঞ্চান্ন।
মা মৃত ছেলের মাথা কোলে নিয়ে, সারা গায়ে মা ও বাবা হাত বোলাতে লাগল।
বাবা কাঁধে করে ছেলের মৃত-দেহ বয়ে স্মশানে গেল। কেউ “হরি-বোল” বলল না। বাবা নিজেই ছেলের মুখাগ্নি করল।
বাবার বুক-পকেটে ছেলের ডেথ -সারটিফিকেট। মা ছেলের বাথরুম-শুতে রোজ গঙ্গা-জল দেয়। বইগুলো, মার্কশিট, ক্যারেকটার-সার্টিফিকেট বাড়িতে যত্নে মা ও বাবা রাখল। ছেলের ছবি বাঁধিয়ে তার সামনে দুজনে খাবার ও জল দেয় রোজ। প্রদীপ ও ধূপ জ্বালায়। ফুলের মালা ও চন্দন পরায়। আর বলে, “এক্ষুণি আমাদের তোর কাছে নিয়ে চল! আমরা যে তোকে ছেড়ে থাকতে পারছি না রে!” সাত বছর পর বাবা আর দশ বছর পর মা – দুজনেই ক্যান্সারে মারা গেল। বইগুলো, মারকসিটগুলো ও সার্টিফিকেটগুলো রয়েই গেল।
✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!