তার নাম নিধু চক্রবর্তী। নাটোর জেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরে পুরোহিত হিসেবেই তিনি পরিচিত। ১৯৪৬ সালে নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতামহ ছিলেন একজন পুরোহিত। তার পিতাও ছিলেন পুরোহিত। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার পরে বংশ পরম্পরায় শুরু করেন পুরোহিতের কাজ।
নিধু চক্রবর্তী ১৭ বছর যাবত চাকরি করেন নাটোর জেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরে। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া শত বিঘা জমির মালিক হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে বর্গাদাররাই হয়ে গেছে তার জমির মালিক। তিনি জমি বিক্রি করেননি তবে কিভাবে তৈরি হয়েছে তার জমির দলিল সে সম্পর্কেও তিনি নিজেও জানেন না।
তিন সন্তানের জনক নিধু চক্রবর্তী কোনরকমে সন্তানদের লালন পালন করেছেন। ছেলেরা যে যার মতন আলাদা আলাদা ভাবে সংসার করছেন। পুরোহিত নিধু চক্রবর্তী যা রোজগার করে তাই দিয়েই স্বামী-স্ত্রী দুজনের সংসার চলছিল অনায়াসে।
করোনাকালীন সময়ে মন্দিরে প্রবেশে বিধিনিষেধ থাকায় ভক্ত সমাগম কম হওয়ার কারণে পুরোহিত নিধু চক্রবর্তীর দিন কাটছে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় মধ্যে দিয়ে। সাময়িকীর প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নিধু চক্রবর্তীর তিনি জানান, ১৭ বছর যাবৎ নাটোর কেন্দ্রীয় মন্দিরে পূজা অর্চনার কাজে নিযুক্ত আছেন তিনি।
মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে নির্ধারিত কোন বেতন না দেওয়া হলেও, দান বক্সে অর্থ বছরে দুইবার মন্দিরের সমস্ত কর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বছরে আনুমানিক গড়ে ৫০ হাজার টাকা দান বক্স এ পাওয়া গেলে তিনি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।
এছাড়া প্রসাদের দক্ষিণা, ভক্ত মন্ডলীর সহযোগিতা পেয়ে গড়ে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা তার রোজগার হত। করোনাকালীন সময়ে মন্দিরে ভক্ত না আসায় তিনি তার যাতায়াতের খরচই পাচ্ছেন না। ফলে পরিবার নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এবং অসহায় জীবন যাপন করছেন।
এছাড়া তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় মন্দির হিসেবে সরকারীভাবে প্রতি মাসে ৭৫ টাকা বেতন ধরা আছে। ১৭ বছর চাকরি জীবনে তিনি একটি টাকাও পাননি। গতবছর করোনাকালীন সময়ে সরকারিভাবে কিছু খাদ্য সহযোগিতা করা হলেও চলতি বছরে কোন সরকারি সহযোগিতাও তিনি পাননি।
সরকারী হিসাব অনুযায়ী নাটোর জেলায় মোট কতজন পুরোহিত রয়েছে? তাদের হালচিত্র কি নিধু চক্রবর্তীর থেকে ভালো? উনাদের সন্ধান জানার দায়িত্ব কার? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সন্ধানী দৃষ্টি…
এ বছরও মসজিদের ইমামগণ সরকারী খাদ্য সহায়তা পেলেও সরকারী সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন মন্দিরের পুরোহিতগণ।