গাজা ইস্যুতে কাতার-ইসরায়েল বৈঠক
গাজায় হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত নতুন করে আলোচনা চলছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েল। এক সূত্র জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা প্রধান। এই বৈঠকে পর আলোচনার সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
শনিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গাজার যুদ্ধ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই এবং জয় না পাওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। ইসরায়েলি নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণে গাজাকে অবশ্যই নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে।
তিনি বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান নভেম্বরে আংশিক জিম্মি মুক্তিতে সহযোগিতা করেছে। হামাসের ওপর তীব্র সামরিক চাপ অব্যাহত রাখা হবে।
নেতানিয়াহু বলেন, এই চাপের ওপর ভিত্তি করে আমি মধ্যস্থতাকারী দলকে নির্দেশনা দিচ্ছি, এই চাপ না থাকলে আমাদের হাতে কিছুই নেই।
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস যোদ্ধারা ১১৪৭ জনকে হত্যা ও ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে। জবাবে ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে প্রায় ১৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হাজারো মানুষ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন।
ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। অনেকে তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার বা বিশুদ্ধ পানি ছাড়া দিন পার করছেন। যা একটি মানবিক সংকট।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ড্যাভিড বানিয়া শুক্রবার শেষ রাতের দিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে রয়টার্সকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে গাজায় বিরতি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে জিম্মিদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাব্য আলোচনা নিয়ে ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নভেম্বরের শেষ দিকে সাত দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরায়েল ও কাতারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে এটিই প্রথম বৈঠক।
এই বৈঠক নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন নেতানিয়াহু। তবে নিশ্চিত করেছেন যে, মধ্যস্থতাকারী দলকে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কাতারের গুরুতর সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ না হলে বন্দি বিনিময়ে কোনও আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তুত না। এই অবস্থান সব মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে তিন জিম্মি নিহতের ঘটনায় নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে উপায় খুঁজে বের করার জন্য।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন চলাকালে তেল আবিবে কয়েক শ’ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। তারা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবি স্লোগান দেন।
শনিবার রাতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দারা তুমুল লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ট্যাংক বোমা ও গোলাবর্ষণ করেছে। এগুলোর পাল্টা হামলায় হামাস যোদ্ধাদের ছোড়া গ্রেনেড ও রকেটের শব্দ শোনা গেছে।
যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা জোরদারের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে ইয়েমেনের হুথিরা। তারা দাবি করেছে, শনিবার লোহিত সাগরে ইসরায়েলি রিসোর্টে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এর আগে হুথিদের হামলার কারণে সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে দুটি আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানি।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, ডেস্ট্রয়ার কার্নে লোহিত সাগরে হুথিদের ছোড়া ১৪টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ব্রিটেন বলেছে, তাদের একটি যুদ্ধজাহাজ একটি বাণিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্য করে ছোড়া ড্রোন ভূপাতিত করেছে।