আফগানিস্তানে নির্যাতিত নারীদের কারাগারে পাঠাচ্ছে তালেবান: জাতিসংঘ
আফগানিস্তানের তালেবান সরকার নির্যাতিত নারীদের সুরক্ষার দোহাই দিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠাচ্ছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
এমন পদক্ষেপের কারণে ওই নারীদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, আফগানিস্তানে নারীদের জন্য রাষ্ট্র-পরিচালিত আর কোনো আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। কারণ, তালেবান সরকার এ ধরনের আশ্রয়কেন্দ্রের কোনও প্রয়োজনীয়তা দেখছেনা।
বিশ্বে নারী অধিকার সবচেয়ে কঠোরভাবে দমন করা দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান অন্যতম ।
দেশটিতে জাতিসংঘ সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) বলছে, আফগান নারী ও মেয়েদের ওপর পুরুষের নির্যাতনের ঘটনা তালবান গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই অনেক বেশি।
তবে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে এমন নির্যাতনের ঘটনা নৈমিত্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশকে ঘিরে ধরা অর্থনৈতিক, আর্থিক ও মানবিক সংকটের প্রভাবের প্রেক্ষাপটে এমনটি ঘটছে বলে জানিয়েছে ইউএনএএমএ।
নারীদেরকে দিন দিনই ঘরের চারদেয়ালের মাঝে বন্দি করে ফেলা হচ্ছে। এতে করে তাদের বিরুদ্ধে পাারিবারিক সহিংসতা কিংবা পুরুষ সঙ্গীর অত্যাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
ইউএনএএমএ জানায়, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে, আফগানিস্তানে নারীদের জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। কিন্তু এগুলো এখন আর নেই।
বিবিসি জানায়, তালেবান কর্মকর্তারা ইউএনএএমএ-কে বলেছেন, এ ধরনের আশ্রয়কেন্দ্রের কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ নারীদেরকে তাদের স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই থাকতে হবে। এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের আশ্রয়কেন্দ্র হচ্ছে ‘পশ্চিমা ধারণা’।
কর্মকর্তারা বলেন, তারা পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরকে নির্যাতিত নারীদের ক্ষতি না করার প্রতিশ্রুতি দিতে বলবেন।
ইউএনএএমএ জানায়, নির্যাতনের শিকার কোনও নারীর সঙ্গে থাকার মতো কোনও পুরুষ আত্মীয় না থাকলে, কিংবা তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থেকে থাকলে সেক্ষেত্রে সেই নারীর সুরক্ষার জন্য তাকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
রাজধানী কাবুলে মাদকাসক্ত ও গৃহহীনদের যেভাবে কারাগারে পাঠানো হয় এটিও তেমনই। আর এই পদক্ষেপ একজনকে স্বাধীনতা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চিত রাখারই সামিল বলে উল্লেখ করেছে ইউএনএএমএ।
তারা বলছে, “আফগানিস্তানে নারীরা যেখানে এমনিতেই অরক্ষিত অবস্থায়, শাস্তিমূলক একটি পরিবেশে আছে, তাদেরকে এভাবে কারাগারে নিয়ে আটকে রাখাটাও তাদের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাবই ফেলবে। কারণ কারাগারে তারা আবারও বন্দিত্বের শিকার হচ্ছে এবং মুক্তি পাওয়ার পর তারা কলঙ্ক বয়ে বেড়ানো এবং বৈষ্যম্যের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।”