বগুড়া থেকে স্বামীর সাথে বরিশালে এসে নিঁখোজ হওয়ার ১০ দিন পর উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দী কলেজ ছাত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্ত বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে।
আজ বৃহষ্পতিবার (০৩ জুন) বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এ মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর নাজনীন আক্তার নামে ওই কলেজ ছাত্রীর মরদেহ তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন।
তিনি জানান, বুধবার (০২ জুন) গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে বস্তাবন্দী এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ পাওয়া যায়।
বগুড়া থেকে নিঁখোজ হওয়া কলেজ ছাত্রীর স্বজনদের সাথে কথা বলে ও পুলিাশের কাছে থাকা ছবি মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ওই মরদেহটি ঐ নিখোঁজ ছাত্রীরই। এরপরে বগুড়ায় খবর দেয়া হলে স্বজনরাও এসে মরদেহ শনাক্ত করেন।
এরআগে দুইদিন বরিশালের গৌরনদী ও বাবুগঞ্জে বগুরা পুলিশের সদস্যরা নাজনীন আক্তারের স্বামী সাকিব হোসেন হাওলাদারকে নিয়ে মরদেহের সন্ধানে অভিযান চালিয়েছিলো, তবে মরদেহ না পেয়ে মঙ্গলবার তারা বগুড়ায় ফিরে যান।
পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রধরে গত এক বছর আগে বগুড়া সদর উপজেলার সাপগ্রাম এলাকার আব্দুল লতিফ প্রমাণিকের মেয়ে ও বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নাজনীন আক্তার (১৯) সঙ্গে বিয়ে হয় সাকিব হোসেন হাওলাদারের।
সাকিব হোসেন হাওলাদার (২৪) বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সাকিবের বাবা ভ্যান চালক আব্দুল করিমের পরিবার কাজের জন্য গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বন্দর সংলগ্ন হরহর গ্রামে বসবাস করেন।
সাকিব জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের একপর্যায়ে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কলেজছাত্রী নাজনীনকে বিয়ে করেন।
গত ২৪ মে নাজনীনকে নিয়ে বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে বাবার ভাড়া বাসায় আসেন। সেখানে এসে নাজনীন জানতে পারে তার বাবা আব্দুল করিম পেশায় ভ্যানচালক। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। মূলত তার স্ত্রী বাড়িতে এসে তাদের টিনের ঘর থেকে ক্ষেপে যায় এবং ভিক্ষুক বলাসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
আর তাকে হত্যার ঘটনার সময় তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না, তারা নানা বাড়িতে ছিলেন জানিয়ে সাকিব বলেন, গালাগাল করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাড়ির পাশের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলে দেন।
এ বিষয়ে গৌরনদী থানার পরিদর্শক (তদšত) তৌহিদুজ্জামান জানান, গ্রেফতারকৃত সাকিবের দেয়া তথ্যানুযায়ী গৌরনদী থানার পুলিশের সহায়তায় বগুড়া কোতওয়ালী থানার পুলিশ সেপটিক ট্যাংকে পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে।
কিন্তু ট্যাংকের মধ্যে নাজনীনের শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়াসহ দু’টি নথ এবং পরিধেয় ওড়না পাওয়া গেলেও মরদেহ পাওয়া যায়নি।
নাজনীন আক্তারের ভাই আব্দুল আব্দুল আহাদ জানান, গত ২৪ মে সাকিব তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনীনকে নিয়ে বরিশালে আসেন। পরে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ও কোন ধরনের যোগাযোগ না থাকায় ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ও সেনানিবাসে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদšত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মো¯তফা জানান, নাজনীন নিখোঁজের বিষয়ে জানতে সোমবার বিকেলে সাকিব হোসেনকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়। এসময় সাকিব অসংলগ্ন কথাবার্তা বললে সন্দেহ হয়।
পরে তাকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নাজনীনকে গৌরনদীর হরহর গ্রামের বাবার ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে এসে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে মরদেহ গুমের বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন।