যেভাবে বাহিনী গড়ল ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস
ইসরায়েলের মাটিতে গত ৭ অক্টোবর চালানো হামলায় হামাসের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল ফিলিস্তিনের আরও পাঁচ সশস্ত্র গোষ্ঠী। ২০২০ সাল থেকে সামরিক কায়দায় একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছে সংগঠনগুলো।
বিবিসির এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস এবং কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী গাজায় যৌথ মহড়া চালিয়েছে। সেই মহড়াগুলোর সঙ্গে ৭ অক্টোবরে পরিচালিত হামলার কৌশলের মিল রয়েছে। মহড়াগুলোর মধ্যে অন্তত একটি হয়েছিল ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তবেষ্টনীর এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে। সেই মহড়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছিল।
ইসরায়েলি নাগরিকদের কীভাবে জিম্মি করবে, সে ধরনের অনুশীলনও করে হামাস। অভিযানের আদলে মহড়া, এমনকি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কীভাবে ভাঙা সম্ভব, সেটির মহড়াও করেছিল হামাস।
২০২০ সালে প্রথম মহড়ার পর পরবর্তী তিন বছরে সব মিলিয়ে চারটি মহড়া চালিয়েছে হামাস। দ্বিতীয় মহড়াটি হয় প্রায় এক বছর পর, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। তৃতীয় মহড়াটি হয় ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। আর সংগঠনের সর্বশেষ মহড়াটি ছিল সত্যিকারের হামলার মাত্র ২৫ দিন আগে। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া চারটি মহড়ার প্রথমটি ঘোষণা করেন, যেটির সাংকেতিক নাম ছিল ‘স্ট্রং পিলার’।
২০১৮ সালের আগে হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। পিআইজে গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র সংগঠন। মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে পোস্ট করা মহড়ার ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে বিবিসি নিশ্চিত করে, পিআইজেসহ ১০টি সংগঠন হামাসের সঙ্গে স্ট্রং পিলার মহড়ায় ছিল।
গাজার সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন হামাস স্বাভাবিকভাবেই ওই সশস্ত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল। ধারণা করা হয়, ফিলিস্তিনের প্রায় ১০টি সংগঠনকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে সক্ষম হয় হামাস। কেন্দ্রীয় কমান্ডের অধীনে গাজার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে ২০১৮ সালে একটি কাঠামো দাঁড় করানো হয়।
ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামলার দিনই ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়। এদের বেশির ভাগই ইসরায়েলি। এই হামলার পর কেবল হামাসের নামডাকই বেশ জোরেশোরে শোনা যায়। এর পরপর পাঁচটি সশস্ত্র সংগঠন ভিডিও প্রকাশ করে ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে দাবি করে। আরও তিনটি সংগঠন টেলিগ্রামে বিবৃতি পোস্ট করে বলেছে, ইসরায়েলে চালানো ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাসের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল তারাও।
ওই হামলার পর তিনটি সংগঠন—পিআইজে, মুজাহিদিন ব্রিগেডস ও আল-নাসের সালাহ আল-দীন ব্রিগেডস দাবি করে যে হামাসের সঙ্গে তারাও ইসরায়েলিদের জিম্মি করেছে। ফলে ওই জিম্মিদের খুঁজে বের করার জন্য চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকার কথাও সামনে আসে। গাজায় সাত দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শেষ হয়েছে। হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে দেশটির কারাগারে থাকা তিন গুণ ফিলিস্তিনির মুক্তির জন্য এই যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর দেনদরবার চলে। এখন হামাস জিম্মিদের কোথায় রেখেছে, সেটির ওপর যুদ্ধবিরতি আর বাড়া না-বাড়ার বিষয়টি নির্ভর করছে।