হামাসের ওপর ভরসা নেই গাজার ৬৭ শতাংশ গাজার বাসিন্দার: জরিপ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ৬৭ শতাংশ ফিলিস্তিনিই উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসকে অপছন্দ করেন এবং মনে করেন এই গোষ্ঠীর শাসনের অবসান হওয়া উচিত। এমনকি হামাসকে ‘দ্বিতীয় দখলদার’ বাহিনী বলেও মনে করেন গাজার অনেক বাসিন্দা।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার আগে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আরব ব্যারোমিটার জরিপটি পরিচালনা করেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে জরিপ চালিয়েছে নিরপেক্ষ এই প্ল্যাটফরমটি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান যৌথভাবে এই প্ল্যাটফরমি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে।
সোমবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে আরব ব্যারোমিটার। এ বিষয়ক একটি বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ বছরের পর বছর ধরে দারিদ্র্যের কশাঘাতে জীর্ণ গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির (হামাস) শাসনকার্য পরিচালানাজনিত অদক্ষতায় হতাশ।’
‘এমনকি হামাসের যে প্রধান মতাদর্শ— ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা— তার সঙ্গেও একাত্ম নন গাজার অধিকাংশ বাসিন্দা; বরং গাজার ফিলিস্তিনিদের একটি বড় অংশই দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের (টু স্টেট সলিউশন) পক্ষে। অর্থাৎ তারা স্বাধীন ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাশাপাশি দেখতে চান।’
এই জরিপ পরিচালনাকারী দলের অন্যতম সদস্য এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিন আমানি জামাল (৫২) একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফিলিস্তিনি। বার্তাসংস্থা এএফপি আমানি বলেন, ‘বর্হিবিশ্বে এমন একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে গাজার বাসিন্দাদের অধিকাংশেই হামাসকে এবং তাদের সহিংসতাকে সমর্থন করেন। সেই কারণে হামাসের যে কোনো সহিংসতার জন্য ঢালও ভাবে গাজার বাসিন্দাদের দায়ী করা হয়। এটা যে পুরোপুরি ভ্রান্ত একটি ধারণা, তার একটি বড় প্রমাণ এই জরিপ।’
আমানি জানান, আরব ব্যারামিটারের যে দলটি গাজায় এই জরিপ পরিচালনা করতে গিয়েছিল, সেই দলের সঙ্গে ছিলেন তিনিও। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কয়েকদিন আগে এই জরিপের কাজ শেষ করে ফিরে আসেন তারা।
গত শতকের আশির দশকের শেষ দিকে উদ্ভূত রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ২০০৬ সালের নির্বাচনে জিতে গাজার উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারপর থেকে এখনও এই গোষ্ঠীটির শাসনই চলছে।
হামাসের অধিকাংশ বাসিন্দাই আরব ব্যারোমিটারকে জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে তারা দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন এবং এজন্য মূলত দায়ী হামাসের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা।
এএফপিকে আমানি বলেন, ‘জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি জানিয়েছেন, গত এক মাস ধরে তারা পরিবারের সদস্যদের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দিতে পারছেন না। ৬০ শতাংশ মনে করেন, তারা স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন না। ৭২ শতাংশ হামাসকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বেচ্ছাচারী গোষ্ঠী বলে মনে করেন এবং তারা জানিয়েছেন— হামাসের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করতে চান, কিন্তু প্রাণের ভয়ে করতে পারছেন না।’
আমানি জামালদের পরিবার একসময় ফিলিস্তিনির পশ্চিম তীর অঞ্চলের রামাল্লা শহরে বসবাস করত। আমানির কৈশরকালেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে স্থায়ী হন।
‘গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের পর হামাসকে তারা দেখেন দ্বিতীয় দখলদার বাহিনী হিসেবে। আরও জানিয়েছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে ১৯৬৭ সালের সীমানাচুক্তির ওপর ভিত্তি করে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল নামের দু’টি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র দেখতে চান।’ বলেন আমানি।