গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনে ৩ লাখ মানুষের বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে অবিরাম হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নির্বিচার এই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে ৬ হাজারেরও বেশি শিশু।
গাজার এই সংঘাতে বর্তমানে মানবিক বিরতি চললেও এই বিরতি শেষ হওয়ার পরপরই গাজায় আবারও হামলা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে ৩ লাখ মানুষ অংশ নেন বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভের আয়োজকরা। রোববার (২৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে মিছিল করেছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী। গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর লন্ডনে এটিই প্রথম বিক্ষোভ মিছিল।
পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ বিক্ষোভকারীই আইনসম্মতভাবেই এদিন প্রতিবাদ করেছেন।
বিবিসি বলছে, লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে এই বিক্ষোভটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে লড়াইয়ে চার দিনের বিরতি চলছে। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং নিহতদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু।
হামাস গত শুক্রবার চার দিনের মানবিক বিরতির প্রথম দিনে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ৩৯ ফিলিস্তিনির মুক্তি নিশ্চিত করেছে এবং বিনিময়ে ২৪ ইসরায়েলি ও বিদেশি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এরপর শনিবার ইসরায়েলের ১৩ বন্দিসহ আরও ১৭ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি। মুক্তি পাওয়া অন্য চার বন্দি থাইল্যান্ডের নাগরিক।
যদিও দ্বিতীয় দফায় এই মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে বেশ কয়েক ঘণ্টার বিলম্বের পর ওই ১৭ জনকে মুক্তি দেয় হামাস। ইসরায়েল চলমান যুদ্ধবিরতির একটি শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে হামাস অভিযোগ তোলার পর বন্দি মুক্তিতে ওই বিলম্ব হয়।
তবে এই বৈরিতা শনিবার কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতায় সমাধান করা হয়। ইসরায়েল এখন তার কারাগার থেকে ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিলম্বের মধ্যেই লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে এই বিক্ষোভ মিছিলটি অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভের আয়োজকরা বলছেন, লন্ডনের পার্ক লেন থেকে হোয়াইটহল পর্যন্ত আয়োজিত এই বিক্ষোভ মিছিলে প্রায় ৩ লাখ লোক অংশ নিয়েছিল।
অবশ্য লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেনি।
বিক্ষোভে প্রায় ১৫০০ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছিল এবং আইন ভঙ্গ করতে পারে এমন শব্দ বা চিত্র সম্পর্কে সতর্ক করে বিক্ষোভকারীদের লিফলেট দেওয়া হয়েছিল। ফিলিস্তিনি পতাকা বহনকারী বিক্ষোভকারীদের সংঘাতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নিতে দেখা গেছে।
লন্ডনের মিছিলে অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনপন্থি এক প্রতিবাদকারী অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সমালোচনা করেন। উত্তর লন্ডনের বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী শন বলেন: ‘আমি জানি না এর (অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি) থেকে কী আসতে চলেছে, আমি জানি না এটি ইতিবাচক কোনও কিছু কিনা, তবে আমি পুরোপুরি জানি, একবার এই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হয়ে গেলে তারা (ইসরায়েল) বোমা হামলা আবারও শুরু করবে এবং আমরা যেখানে ছিলাম ঠিক সেখানেই আবার ফিরে যাবো, তাই আমি এটা থেকে কিছুই আশা করছি না।’
অন্যদিকে লন্ডনের পাশাপাশি গ্লাসগো এবং কার্ডিফেও এদিন বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।