রাশিয়ার আগ্রাসনে ২৫০০ ইউক্রেনীয় শিশু নির্বাসনে
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘সামরিক অভিযানের’ নামে রাশিয়ার হামলা চালানোর পর থেকে ২ হাজার ৪০০-এর বেশি ইউক্রেনীয় শিশুকে জোর করে বেলারুশে নির্বাসিত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
ইউক্রেনীয় শিশুদের রাশিয়ায় জোর করে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বেলারুশের কথিত ভূমিকা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্কুল অব পাবলিক হেলথের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের এই অনুসন্ধানের গুরুত্ব অনেক।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইউক্রেনে রুশ অধিকৃত অঞ্চলের কমপক্ষে ১৭ শহর থেকে ৬-১৭ বছর বয়সী ইউক্রেনীয়দের জোর করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ২ হাজারের বেশি শিশুকে বেলারুশের মিনস্ক অঞ্চলের দোবরাভা শিশু কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে ইয়েল চিহ্নিত করেছে। আর ৩৯০ জন শিশুকে অন্য শিশু কেন্দ্রগুলোয় নেওয়া হয়েছে।
তবে কিয়েভের আঞ্চলিক মানবাধিকার কেন্দ্রের আইনজ্ঞ ক্যাটেরিনা রাশেভস্কার দেওয়া পরিসংখ্যানটি আরও বেশি। তাঁর দাবি, রাশিয়ার হামলা শুরুর পর অন্তত ২০ হাজার শিশুকে শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেন থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা ইউক্রেনীয় শিশুদের জোরপূর্বক স্থানান্তরকে সম্ভাব্য গণহত্যা হিসেবে ধরে নিয়ে এখন তদন্ত করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ইউক্রেনের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ছোড়া গোলার আঘাতে ২ জন নিহত এবং অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইউক্রেনের ওদেসা বন্দর সফরে গিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধপ্রচেষ্টায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নাম লেখানোর পর সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের এটিই প্রথম সফর।
ক্যামেরন বলেন, যত দীর্ঘ সময় লাগুক, ইউক্রেনের জন্য যা কিছু সহায়তা প্রয়োজন, যুক্তরাজ্য তা অব্যাহত রাখবে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রতি মনোযোগ স্থানান্তর এবং বাড়তি সহায়তা জোগানো ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বাদানুবাদ জোরদার হয়েছে।
তাই ইউক্রেনকে আশ্বস্ত করতে শীর্ষ ব্রিটিশ কূটনীতিক ক্যামেরন রুশ হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু নামে খ্যাত বন্দরনগরীতে গেলেন।
যুক্তরাজ্য বলেছে, ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত তারা ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন সামরিক সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছে ৩০ হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে।
এক বিবৃতিতে ক্যামেরন বলেন, ‘রাশিয়া মনে করে, পশ্চিমারা শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেবে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আমার প্রথম আলোচনায় আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি, যুক্তরাজ্য ও আমাদের অংশীদারেরা ইউক্রেন এবং এর জনগণের বিজয় নিশ্চিতে যত দিন লাগবে, তত দিন সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
এদিকে ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় খুব কমই সফলতা দেখা গেছে এবং মনে হচ্ছে যুদ্ধ একটা স্থবিরতায় পৌঁছাতে পারে। তবে এ পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, যে আগ্নেয়গিরিটি ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে, তা অবশ্যই জেগে উঠবে।