মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের কাছে শহর ও ফাঁড়ি হারাচ্ছে জান্তা
জান্তাবিরোধী বিপ্লবী সরকারের পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে এক যোগে হামলা চালাচ্ছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। গত কয়েক দিন ধরে শান, মাগওয়ে, সাগাইং, চিন ও রাখাইনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে ফাঁড়ি হারিয়েছে সেনারা। মিয়ানমারবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে একটি সামরিক জোট গড়ে তুলেছে। অক্টোবরের শেষ দিকে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত হামলা শুরু করেছে তারা। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ৯টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এসব শহরে কয়েক দশক ধরে সেনা ব্যাটালিয়ন মোতায়েন ছিল।
শান রাজ্যে পাঁচটি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা। এছাড়া সাগাইং অঞ্চলে দুটি ও চিন রাজ্যে তিনটি শহর এখন বিদ্রোহীদের দখলে।
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গঠিত হয়েছে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) ও আরাকান আর্মির সমন্বয়ে। তাদের হামলায় সহযোগিতা করছে জান্তাবিরোধী বিপ্লবী সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)-এর প্রতি অনুগত পিডিএফ গোষ্ঠীগুলো।
রাখাইনে প্রায় ৪০টি ফাঁড়ি ছেড়েছে সেনাবাহিনী
রাখাইনে আরাকান আর্মির হামলায় সোমবার থেকে প্রায় ৪০টি অবস্থান ছেড়েছে সেনাবাহিনী। অপারেশন ১০২৭-এর অধীনে এই হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।
গত বছর নভেম্বরে জান্তার সঙ্গে অলিখিত সমঝোতা ভেঙে এই প্রথম হামলা চালালো তারা। রাখাইনে তিনটি শহরের পাঁচটি অবস্থানে হামলা চালায় রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর যোদ্ধারা।
আরাকান আর্মি দাবি করেছে, তারা রাথেডাউংয়ে একটি সীমান্ত ফাঁড়ি ও একটি ক্যাম্প দখল করেছে। বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে ২৪ সেনা নিহত হয়েছে। ছয় বিদ্রোহীও নিহত হয়েছে।
শান রাজ্যে বিদ্রোহীদের দখলে আরও সেনা ঘাঁটি
দ্য মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটি অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) দাবি করেছে, মঙ্গলবার সমন্বিত অভিযানের অংশ হিসেবে শান রাজ্যের ককাং এলাকায় আরেকটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে দখল করেছে।
এর আগে সোমবার এমএনডিএএ ও প্রতিরোধী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর চারটি ঘাঁটি ও একটি সামরিক চেকপয়েন্টের দখল নেয়।
বাহিনীটি দাবি করেছে, অভিযানের প্রথম ১৯ দিনে সেনাবাহিনীর ১৪৪টি ঘাঁটি দখল করা হয়েছে।
দ্য তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) মঙ্গলবারও কিয়াউকমি শহরে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে হামলা অব্যাহত রেখেছে। তাঙ্গিয়ান টাউনশিপে একই দিনে হামলা চালিয়ে আরেকটি সামরিক ফাঁড়ি ধ্বংস করেছে। মঙ্গলবার রাতে সাখাম থিত কোনে এলাকায় আরেকটি ফাঁড়িতে তারা হামলা চালিয়েছে।
টিএনএলএ জানিয়েছে, মঙ্গলবার এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার দিয়ে সেনারা তিনটি বিমান হামলা চালিয়েছে।
মাগওয়েতে ড্রোন দিয়ে বিদ্রোহীদের হামলা
ইয়ং ফোর্স নামের প্রতিরোধ গোষ্ঠী জানিয়েছে, তারা এবং পিডিএফ গোষ্ঠীর আরও তিনটি বাহিনী ড্রোন দিয়ে কিয়াথতোয়ে পুলিশ স্টেশন ও আনাউক হপোনে কান গ্রামে রবিবার হামলা চালিয়েছে।
তারা আরও দাবি করেছে, চাউং খউয়া গ্রামে একটি সামরিক ইউনিটের ওপর ড্রোন দিয়ে বোমাবর্ষণ করেছে। তবে সেনাবাহিনীর হতাহতের কথা জানা যায়নি।
সাগাইং অঞ্চলে তুমুল লড়াই
মঙ্গলবার সাগাইং অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ৩ সেনা নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সেনাবাহিনীর ৮০ সদস্যকে ফাঁদে ফেলে হামলা চালানো হয়।
সংঘর্ষের সময় সেনাবাহিনী কামান ইউনিট হাউইটজার ও হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালিয়েছে। পিডিএফ গোষ্ঠী চারটি অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিনিয়ে নিয়েছে।
কিয়াহ রাজ্যে সামরিক ঘাঁটি দখল
কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) জানিয়েছে, কিয়াহ রাজ্যে রাজধানীতে ‘অপারেশন ১১১১’ এর অংশ হিসেবে ১১০ সেনাকে হত্যা ও ৩৮ জনকে বন্দি করেছে। লইকাউ ইউনিভার্সিটিতে দুই দিনের হামলায় সেনাদের এই হতাহত ও বন্দির ঘটনা ঘটে।
১১ নভেম্বর কারেনি আর্মি, কেএনডিএফ, কারেনি ন্যাশনাল পিপল’স লিবারেশন ফ্রন্ট ও পিডিএফ গোষ্ঠী ১১ নভেম্বর এই অভিযান শুরু করেছে। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ১১১১’।
কেএনডিএফ দাবি করেছে, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ জান্তা ঘাঁটি দখলে নিয়ে প্রতিরোধ বাহিনী।