থানায় ডায়রী করতে এসে এসআই কর্তৃক গৃহবধূকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানায় অভিযোগকারী এক গৃহবধূকে (৪৫) যৌন নিপীড়নের অভিযোগে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) মো. আসাদুল (৩০) এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইবুনালে মামলা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর সাগরদী ধান গবেষণা এলাকার ওই গৃহবধূ আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটি দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক মো. আবু শামীম আজাদ মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুলকে (৩০) মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
গৃহবধূর পক্ষে আদালতে আইনজীবী ছিলেন- আসাদুজ্জামান হাওলাদার। তিনি মামলার আরজির বরাত দিয়ে জানান, গত বছর ওই গৃহবধূর এক প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে ওই গৃহবধূকে জমি ছেড়ে দিতে প্রতিপক্ষরা নানা হুমকি দেন। ওই গৃহবধূর স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা। তার কর্মস্থল বরিশালের বাইরে ছিল। এ কারণে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর গৃহবধূ নিজেই কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
তিনি জানান, জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসাদুল তাকে থানায় এসে দেখা করতে বলেন। গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূ কোতোয়ালি মডেল থানায় যান। এসআই আসাদুল ওই গৃহবধূকে তার কক্ষে নিয়ে যান। এরপর নানা অজুহাত দেখিয়ে তাকে দীর্ঘসময় বসিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে স্বাক্ষর নেয়ার অজুহাত দেখিয়ে গৃহবধূর স্পর্শকাতার স্থানে হাত দেন। এরপর জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন। এ সময় গৃহবধূ প্রতিবাদ করলে এসআই আসাদুল তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এদিকে ওই গৃহবধূর স্বামী কর্মস্থল থেকে বাসায় আসেন। স্ত্রীর দেরী দেখে থানায় গিয়ে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে এসআই আসাদুলের কক্ষে গিয়ে তিনি হাজির হন। তখন গৃহবধূর কাছ থেকে দূরে সরে যান আসাদুল।
মামলার আরজিতে গৃহবধূ আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার পরপরই থানার ওসি নুরুল ইসলামকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি নারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুমা পারভীনকে দিয়ে ঘটনা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এরপরও কয়েকমাস পেরিয়ে গেলেও এসআই রুমা পারভীন বা থানার অন্য কোনো কর্মকর্তা গৃহবধূর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
গত ২৩ মে এসআই রুমা পারভীনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাকে ওসি এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশ দেননি। এরপর থানায় মামলা দিতে চাইলে ওসি এজাহার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান।
আদালতে মামলা করার বিলম্বের কারণ হিসেব গৃহবধূ থানার ওসি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে সময় ক্ষেপন করেছেন বলে আরজিতে উল্লেখ করেন। এজন্য বাদী ঘটনার পর আদালতে মামলা করতে পারেননি।
তিনি আরজিতে আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার সাক্ষী প্রমাণ আছে। এছাড়া সে দিনের থানার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে বলে তিনি আরজিতে উল্লেখ করেছেন।
তবে অভিযুক্ত এসআই আসাদুল বলেন, গৃহবধূ যে ঘটনা উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন, সরেজমিনে তদন্ত করে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। জিডির তদন্ত প্রতিবেদন মনমত না হওয়ায় ওই গৃহবধূ তাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, এসআই আসাদুলের বিরুদ্ধে এক নারী অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তাই এ বিষয় কিছু বলা ঠিক হবে না।