যুক্তরাজ্যজুড়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ব্যাপক বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন আট হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু।
ইসরায়েলি এই হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া লন্ডনের পাশাপাশি এদিন বিক্ষোভ হয়েছে ম্যানচেস্টার, গ্লাসগো, বেলফাস্টসহ যুক্তরাজ্যের অন্যান্য শহরেও।
রোববার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবি জানাতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী লন্ডন এবং যুক্তরাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন।
গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা বন্ধের দাবিতে শনিবার আয়োজিত ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা পতাকা ও ব্যানার হাতে যুক্তরাজ্যের রাজধানীর রাস্তায় জড়ো হয়।
বিবিসি বলছে, লন্ডনের এই বিক্ষোভ থেকে শনিবার নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কয়েক জন সন্দেহভাজন ঘৃণামূলক অপরাধে জড়িত হয়েছেন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া শনিবার ম্যানচেস্টার, গ্লাসগো, বেলফাস্ট এবং অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে।
মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়ে ইসরায়েল।
হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া আরও ২২৯ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
হামাসের সেই হামলার প্রতিশোধে গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এখন পর্যন্ত আট হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এমনকি নিহত এসব ফিলিস্তিনির অর্ধেকই শিশু বলেও জানিয়েছে গাজার এই মন্ত্রণালয়।
বিবিসি বলছে, ইসরায়েলি নির্বিচার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে গত তিন সপ্তাহান্তেই যুক্তরাজ্যের প্রধান শহরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার বিকেলে গোল্ডেন জুবিলি ব্রিজের কাছে জনতা জড়ো হন। এসময় তাদের হাতে ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুন’ এবং ‘ফিলিস্তিন স্বাধীন করুন, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটান’ লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।
এছাড়া বিক্ষোভকারীরা ‘ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ কর। গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ কর’ এবং ‘আমরা সবাই ফিলিস্তিনি’ স্লোগানও দেন।
লন্ডনে বিক্ষোভ চলাকালীন ক্রিফ এল আমরাউই নামে এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন: ‘মিছিল করার সময় আমি কাঁদছি কারণ শিশুদের প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে। কেন? কেন তারা আরও মানুষকে হত্যা করতে চায়?’
আবদুল মাহফুদি নামে এক ব্যক্তি তার সন্তানদের নিয়ে শনিবারের এই বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বলেন: ‘আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিশুদের হত্যা বন্ধ করা। তাদের থামাতে হবে।’
বিবিসি বলছে, বিক্ষোভের সময় লন্ডনজুড়ে এক হাজারেরও বেশি মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত নয়জনের মধ্যে সাতজনকে জনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত অপরাধের জন্য এবং দুজনকে অফিসারদের ওপর সন্দেহভাজন হামলার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে পুলিশ বলেছিল, এক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে হোয়াইটহলে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া ম্যানচেস্টারের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির বাইরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী শনিবার এক সমাবেশে অংশ নেন। অন্যদিকে প্রায় ৩ হাজার বিক্ষোভকারী বেলফাস্ট সিটি সেন্টারে সমাবেশের জন্য জড়ো হন।
এসময় তারা রয়্যাল এভিনিউ ধরে সিটি হল পর্যন্ত মিছিল করেন বলেও জানিয়েছে বিবিসি।