বাংলাদেশের উপকূলে উঠে নিম্নচাপে পরিণত ঘূর্ণিঝড় হামুন, দুইজনের মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় হামুন বঙ্গোপসাগর থেকে উপকূলে উঠে আসার পর বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। স্থলভূমিতে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।
ঝড়ে কক্সবাজারে দেয়াল ধসে এবং গাছ চাপা পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
ঝড়টি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বাতাসের গতি নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুধবার মধ্যরাত একটার দিকে ঝড়টি বাংলাদেশের পুরোপুরি উপকূূল অতিক্রম করে স্থলে উঠে আসে। এরপর স্থলভাগের ওপর দিয়ে যেতে যেতে বৃষ্টি ঝড়িয়ে আরও দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপের আকারে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে থাকে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানাচ্ছে, ঝড়টি স্থলভাগের ওপর দিয়ে অগ্রসর হতে হতে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একই সংকেত দেয়া হয়েছে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও।
ঝড়ের কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাস বইছে বলে জানা যাচ্ছে। সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঝড়ে কক্সবাজারে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের একজন দেয়া ধসে আরেকজন গাছ চাপা পড়ে মারা গেছেন।
সোমবার সকালের দিকেও ঘূর্ণিঝড় হামুন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় থাকলেও বিকালের দিকে শক্তি হারিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
প্রথমে ঝড়টি পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের মাঝামাঝি এলাকার দিকে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। সেই হিসাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল।
কিন্তু পরে ঝড়ের গতিপথ ঘুরে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা ছাড়া অন্য জেলার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হয়নি। আবার অনেকে প্রথমে আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও সন্ধ্যার পর বাড়িতে চলে গেছেন।
উপকূলীয় জেলাগুলোর আশেপাশের দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যণ্ত জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতির কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রাখা হয়েছিল পটুয়াখালী-ঢাকাসহ সব রুটের লঞ্চসহ নৌযান চলাচল। তবে বুধবার থেকে পুনরায় নৌ-চলাচল শুরু হয়েছে।
ঝড় চলে গেলেও উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে রবিবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় হামুনে পরিনত হয়।
ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর সেটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
হামুন নামটি ইরানের দেওয়া। যার অর্থ হচ্ছে সমতল ভূমি বা পৃথিবী।
ঘূর্ণিঝড় হামুন বাংলাদেশে আঘাত করা চলতি বছরের দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। এর আগে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছিল।
মেঘমালা দেখা যায় যার ঘণীভূত হওয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস ঘূর্ণিঝড় প্রবণ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।