ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া আরো দুই জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস
ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া আরো দুই জিম্মিকে সোমবার মুক্তি দিয়েছে হামাস। মুক্তি পাওয়া বয়স্ক দুই নারী হলেন ৭৯ বছরের নুরিত কুপার এবং ৮৫ বছরের ইওচেভেদ লিফশিৎজ।
সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০টির দিকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানায় বিবিসি। মুক্তি পাওয়া দুই নারীকে চিকিৎসার জন্য রাজধানী তেল আবিবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর গাজা সীমান্তবর্তী অঞ্চল কিবুৎজ নির ওজ থেকে ওই দুই নারীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। হামাস দুই নারীর স্বামীদেরও জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে। তারা এখনো গাজায় বন্দি আছে।
দুই নারীকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা টেলিগ্রামে বলেন, “আমরা তাদের মানবিক দিক এবং অসুস্থতার কারণে মুক্তি দিয়েছি।”
হামাসের প্রকাশ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অন্ধকারের মধ্যে দুই বয়স্ক জিম্মিকে রেড ক্রসের কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
ওই সময় ইওচেভেদ লিফশিৎজ নিজের পরিচয় দিয়ে তার বয়স নিশ্চিত করেন এবং তারপর চলে যাওয়ার আগে মাস্ক পরা এক হামাস যোদ্ধার দিকে ঘুরে করমর্দন করে বলেন ‘শালম’ (শান্তি)।
ইওচেভেদের স্বামীর নাম ওদেদ, বয়স ৮৫ বছর। যিনি শান্তির পক্ষে কাজ করা একজন সমাজকর্মী। তিনি অবসর গ্রহণের পর গাজার ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য গাড়ি চালিয়ে ইসরায়েলের হাসপাতালে নিয়ে আসার কাজ করেন।
হামাসের ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকেও এক বিবৃতিতে দুই নারীর মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের গ্রহণ করে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
এই দুই জিম্মিকে মুক্তির বিষয়ে সহায়তা করার জন্য মিশরকে ধন্যবাদ দিয়েছে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে জিম্মিদের বাড়িতে নিয়ে আসতে রেড ক্রসের ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার’ জন্যও ধন্যবাদ দিয়েছে দেশটি।
গত শুক্রবার আমেরিকান এক মা ও তার ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে মুক্তি দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল থেকে নিয়ে যাওয়ার জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করে হামাস। ইসরায়েলের গণমাধ্যম এবং আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আরো ৫০ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতির গুঞ্জনের বিষয়ে খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন এক হামলার মাধ্যমে ১৪শ’র বেশি মানুষকে হত্যা করে ইসরায়েল। মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী ওই হামলায় হামাস যোদ্ধারা যেনো রক্তের খেলায় মেতে উঠেছিল। নির্বিচারে হত্যার পাশাপাশি তারা ইসরায়েল থেকে ২২২ জনকে ‘যুদ্ধ বন্দি’ করে গাজায় নিয়ে যায়।
হামাসের হামলার দিন থেকেই টানা বিমান হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে ইসরায়েল। বন্ধ করে দিয়েছে পানি, বিদ্যুৎ, খাবার ও জ্বালানি সরবরাহ। ইসরায়েলের হামলায় এরইমধ্যে গাজায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তারমধ্যে রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এক দিনেই মারা গেছে ৪৩৬ জন। গাজায় নিহতদের মধ্যে ২, ০৫৫টি শিশুও রয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা গাজার ৩২০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।