বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মেসি ম্যাজিকে উড়ছে আর্জেন্টিনা
ফিট হয়ে লিওনেল মেসি মাঠে নামবেন, অথচ ম্যাচজুড়ে ঝলক দেখাবেন না– এটা যেন সাম্প্রতিক সময়ে কল্পনাতীত বিষয়। আগের ম্যাচেও বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হয়ে শুরুর একাদশে ছিলেন না তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে মেসি নেমেছিলেন বদলি ফুটবলার হিসেবে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আজ (বুধবার) পেরুর বিপক্ষে প্রথম থেকেই খেলেছেন, মাঠে নেমেই করেছেন জোড়া গোলও। যার ওপর ভর করে বাছাইয়ে টানা চতুর্থ ম্যাচ জিতল আর্জেন্টিনা।
চোটের অস্বস্তিতে থাকায় ইন্টার মায়ামির হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচে মাঠে দর্শক হয়ে ছিলেন মেসি। যার অধিকাংশ ম্যাচেই টানা হার দেখেছে আমেরিকান ক্লাবটি। এরপর তাকে ছাড়া বাছাইয়ের একটি ম্যাচও খেলে আর্জেন্টিনা। তবে লিওনেল স্কালোনির দলকে এ সময় কোনো নেতিবাচক ফল দেখতে হয়নি। সর্বশেষ ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে তাদের জয়টা এসেছিল কষ্টসাধ্য, দ্বিতীয়ার্ধে নেমে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও গোলের দেখা পাননি মেসি। আজ প্রথমার্ধেই তিনি জোড়া গোল পেয়েছেন, যা নিয়ে আর্জেন্টিনা ২-০ ব্যবধানে পেরুকে হারিয়েছে।
ম্যাচের আগেরদিন পেরুর মাঠে খেলাটা কিছুটা কঠিন বলে জানিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী কোচ স্কালোনি। আজ স্তাদিও ন্যাসিওনাল ডি লিমায় সেই দাপটটাই শুরুতে দেখিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু ম্যাচের লাগাম হাতে নিতে বেশিক্ষণ সময় নেয়নি মেসিবাহিনী। ম্যাচের ৩২ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন মেসি। নিকোলাস গঞ্জালেসের বাড়ানো বলে বক্সের ডান দিক থেকে বাম পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন আর্জেন্টাইন তারকা।
এর মিনিট দশেক পরই তিনি দ্বিতীয় গোলও পেয়ে যান। এনজো ফার্নান্দেসের পাস পেয়েও সেটি এড়িয়ে মেসির জন্য ছেড়ে দেন ম্যানচেস্টার সিটির তারকা ফরোয়ার্ড জুলিয়ান আলভারেজ। এরপর নিখুঁত শটে বল জালে পাঠান মেসি। এর মাধ্যমে লাতিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এখন সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড মেসির দখলে। ৩১ গোল নিয়ে তিনি সবার উপরে আছেন। ২-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যাওয়া আর্জেন্টিনার দখলে ছিল ৭৫ শতাংশ বল।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমেও আক্রমণের ধারা ধরে রাখে আর্জেন্টাইনরা। ফলে ৫০ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুযোগ আসে নিকোলাস গঞ্জালেসের সামনে। কিন্তু শেষ সময়ের মরিয়া স্লাইডে ব্যবধান বাড়তে দেননি উইল্দার কার্তাহেনা। গতিময় ফুটবলে পরের কিছুক্ষণ আর্জেন্টিনার রক্ষণকে চাপে রাখে পেরু। নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ফের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয় আর্জেন্টিনা। ৫৭তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে বল জালে বলও পাঠানে মেসি। তবে ভিএআর মনিটরে রিপ্লে দেখে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।
এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও সুযোগ আসে মেসির সামনে। তবে ছোট ডি-বক্স থেকে ডিফেন্ডারদের চ্যালেঞ্জের মুখে শট নিতে পারেননি। পরের মিনিটে তার শট বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে। ৮৪তম মিনিটে ব্যবধান কমানোর কাছাকাছি ছিল পেরুও। খুব কাছ থেকে নেওয়া হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রেনাতো তাপিয়া। ফলে বাছাইয়ের চতুর্থ ম্যাচেও নিজেদের প্রথম গোল পাওয়া হয়নি পেরুর।
টানা চতুর্থ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও দৃঢ় করেছে আর্জেন্টিনা। ২২ বছর পর ব্রাজিলকে হারানো উরুগুয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এসেছে দুই নম্বরে। সমান পয়েন্ট নিয়ে তিনে নেমে গেছে ব্রাজিল।
এদিন দেশের হয়ে আর্জেন্টাইন মহাতারকার শেষ গোলটি ছিল ১০৬তম। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল করা ইরানের আলি দাইয়ির (১০৮) সঙ্গে মেসি ব্যবধান আরও কমালেন। ১২৭ গোল করে এখনও অনেকটা দূরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডধারী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।