ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আফগানিস্তানের স্মরণীয় জয়
মিডল স্টাম্পের ওপরে রাশিদ খানের বল স্লগ খেলার চেষ্টায় পারলেন না মার্ক উড। বল ভেঙে দিল স্টাম্প। গর্জন করে দুই হাত প্রসারিত করে আকাশের দিকে তাকালেন রাশিদ। সতীর্থরা এগিয়ে এসে তাকে ঘিরে মেতে উঠল আনন্দ উৎসবে। আফগানিস্তানের ডাগআউটেও সবার মুখে চওড়া হাসি। আনন্দটা একটু বেশিই হওয়ার কথা তাদের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপে হারানো বলে কথা!
চলতি বিশ্বকাপে প্রথম অঘটনের জন্ম দিল আফগানিস্তান। দিল্লিতে রোববার তারা শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারাল ৬৯ রানে। ২৮৪ রানের পুঁজি গড়ে প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দিল ২১৫ রানে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে কোনো সংস্করণে আফগানিস্তানের প্রথম জয় এটি। এর আগে গত দুই বিশ্বকাপের দুটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টির সবগুলি জিতেছিল ইংল্যান্ড।
একই সঙ্গে বিশ্বকাপে টানা ১৪ ম্যাচ হারের পর অবশেষে জয়ের স্বাদ পেল আফগানরা। বিশ্ব মঞ্চে সব মিলিয়ে ১৮ ম্যাচে তাদের স্রেফ দ্বিতীয় জয় এটি। প্রথমটি ছিল ২০১৫ আসরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।
আফগানিস্তানের এবারের স্মরণীয় জয়ের নায়ক মুজিব। এই রহস্য স্পিনার ব্যাট হাতে ১৬ বলে ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংসের পর হাত ঘুরিয়ে ৫১ রানে নেন ৩ উইকেট।
মূলত আফগান স্পিনেই কুপোকাত হয়েছে ইংলিশ ব্যাটিং। তিন স্পিনার মিলে ভাগ করে নিয়েছেন ৮ উইকেট। লেগ স্পিনার রাশিদ ৩৭ রানে ৩টি ও মোহাম্মদ নাবি ১৬ রানে নিয়েছেন ২টি।
ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুকের ৬১ বলে ৬৬ রান ছাড়া আর কেউ উল্লেখ্য করার মতো কিছু করতে পারেননি।
ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ৫৭ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন এই ওপেনার। পরে ইকরাম আলিখিল খেলেন ৫৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস।
অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের উইকেটে এ দিন বল একটু থেমে থেমে এসেছে। স্পিন ধরেছে বেশ। আফগানিস্তান বোলিংও শুরু করে মুজিবকে দিয়ে। প্রথম সাফল্য আসে যদিও পেসারের হাত ধরে। দ্বিতীয় ওভারে জনি বেয়ারস্টোকে এলবিডব্লিউ করে দেন ফাজালহাক ফারুকি।
পাওয়ার প্লেতেই মুজিবের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন জো রুট। দাভিদ মালান দলকে কিছুটা টানলেও বড় করতে পারেননি নিজের ইনিংস (৩২)।
দারুণ এক ডেলিভারিতে জস বাটলারকে বোল্ড করে দেন নাভিন-উল-হাক। ৯১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। লিয়াম লিভিংস্টোনকে টিকতে দেননি রাশিদ। স্যাম কারান ও ক্রিস ওকসও হতে পারেননি উদ্ধারকর্তা। দলকে টানছিলেন যিনি, সেই ব্রুককে ক্যারম বলে সাজঘরের পথ দেখান মুজিব।
১৬৯ রানে ৮ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের তখন দুইশ হওয়া নিয়েই শঙ্কা। লেজের ব্যাটসম্যানদের কল্যাণে কোনোমতে দুইশ ছড়াতে পারলেও শেষ পর্যন্ত বড় হারই সঙ্গী হলো তাদের।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে গুরবাজের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় আফগানিস্তান। দারুণ সব শটের পসরা মেলে তিনি নাজেহাল করে দেন ইংলিশ বোলারদের।
পাওয়ার প্লেতে আফগানিস্তান তোলে বিনা উইকেটে ৭৯ রান, বিশ্বকাপে প্রথম ১০ ওভারে যা তাদের সর্বোচ্চ।
১১৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ইব্রাহিম জাদরানের বিদায়ে। যেখানে ইব্রাহিমের অবদান কেবল ২৮।
৩৩ বলে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম পঞ্চাশ ছুঁয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছুটছিলেন গুরবাজ। কিন্তু রান আউট হয়ে আক্ষেপ সঙ্গী হয় তার।
অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি, আজমাতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নাবি তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি এ দিন। একটা পর্যায়ে ১৯০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। সেখান থেকে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮৪ রানের পুঁজি পায় ইকরাম, রাশিদ ও মুজিবের ব্যাটে।
রাশিদ-মুজিবরা পরে বোলিংয়েও আলো ছড়িয়ে দলকে এনে দিলেন দারুণ এক জয়। চলতি আসরে প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর এলো তাদের এই আনন্দের উপলক্ষ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৪৯.৫ ওভারে ২৮৪ (গুরবাজ ৮০, ইব্রাহিম ২৮, রেহমাত ৩, শাহিদি ১৪, ওমারজাই ১৯, ইকরাম ৫৮, নাবি ৯, রাশিদ ২৩, মুজিব ২৮, নাভিন ৫, ফারুকি ২*; ওকস ৪-০-৪১-০, টপলি ৮.৫-১-৫২-১, কারান ৪-০-৪৬-০, রশিদ ১০-১-৪২-৩, উড ৯-০-৫০-২, লিভিংস্টোন ১০-০-৩৩-১, রুট ৪-০-১৯-১)
ইংল্যান্ড: ৪০.৩ ওভারে ২১৫ (বেয়ারস্টো ২, মালান ৩২, রুট ১১, ব্রুক ৬৬, বাটলার ৯, লিভিংস্টোন ১০, কারান ১০, ওকস ৯, রশিদ ২০, উড ১৮, টপলি ১৫*; মুজিব ১০-১-৫১-৩, ফারুকি ৭-০-৫০-১, নাভিন ৭-০-৪৪-১, নাবি ৬-০-১৬-২, রাশিদ ৯.৩-১-৩৭-৩, ওমারজাই ২-০-১৩-০)
ফল: আফগানিস্তান ৬৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুজিব উর রহমান