বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আড়াই হাজার চাকরিপ্রার্থীকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশের জন্য চার সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৩১ মে) এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদন শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।গত ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার নিবন্ধনধারীকে নিয়োগ দিয়ে এনটিআরসিএ’র জারি করা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত এবং নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়া আদেশ (মোডিফাই করে)তুলে নিয়েছেন হাইকোর্ট।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের নিয়োগে সুপারিশের রায় বাস্তবায়ন না করায় এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী চার সপ্তাহ পর হাইকোর্টের কার্যতালিকা আসবে।
রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ দিন আদালত অবমাননার আবেদনকারী শিক্ষকদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান,অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া ও ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ (ফরহাদ)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। রিটে এনটিআরসিএ’র পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান ভূইয়া।
এর আগে গত ২৩ মে এই আদেশের ওপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য পিছিয়ে আজ ৩১ মে পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন আদালত। তবে,এই সময়ের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।গত ২৩ মে হাইকোর্টের গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এনটিআরসিএ কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় আড়াই হাজার চাকরিপ্রার্থীকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশের জন্য বেঁধে দেয়া ৭ কার্যদিবসের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে সুপারিশের অগ্রগতি হলফনামা আকারে জমা দেয়ার বিষয়ে শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল।
পরে ২৩ মে নির্ধারিত দিনে এনটিআরসিএ’র আইনজীবী আদালতকে জানান, তারা নিয়োগের সুপারিশ করা সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালনের প্রক্রিয়া করছেন। কিন্তু রিটকারী আইনজীবী এই দাবির বিরোধিতা করেন। পরে শুনানি ও আদেশের জন্য ৩১ মে পরবর্তী দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ৬ মে হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চ এনটিআরসিএ কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় আড়াই হাজার চাকরিপ্রার্থীকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য সাতদিন সময় দেন।
একই সঙ্গে গত ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার নিবন্ধনধারীকে নিয়োগ দিয়ে এনটিআরসিএ’র জারি করা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত এবং নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম এসময় পর্যন্ত স্থগিত রাখারও আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি শুনানি হয়।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া সেদিন বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারী প্রায় আড়াই হাজার জনকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি এ সময়ের জন্য স্থগিত করেন আদালত। আজ সেটা শুনানির জন্য ধার্য ছিল। শুনানির নির্ধারিত দিনে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ অগ্রগতি দাখিল করবেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন।’
এর আগে গত ৭ মার্চ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
একই সঙ্গে নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করতে বলেন আদালত। আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়ন না করায় পুনরায় এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর এনটিআরসিএ কর্তৃক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। আদালত অবমাননার বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসিএ কোনো বিজ্ঞপ্তি দিতে পারবে না বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর এক রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি জাতীয় মেধাতালিকা করাসহ সাত দফা নির্দেশনা দেন। ওই রায়ে বলা হয়, এনটিআরসিএ নিয়োগের উদ্দেশ্যে যদি কোনো সুপারিশ করে তবে তা ৬০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। সনদধারীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদ বহাল থাকবে। কিন্তু এনটিআরসি কর্তৃপক্ষ এ রায় বাস্তবায়ন না করেই তৃতীয় দফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করায় রিট আবেদনকারীরা আদালত অবমাননার আবেদন করেন।