ভ্রমণবৃত্তান্ত
চকিত উদ্ভাস থেকে ডানা মেলে
বাতাসে মিশে যাওয়া
এই আমার ভ্রমণবৃত্তান্ত।
ভোররাত্রির ভেতর আমি শিশির হয়ে জন্মাব।
আমি ছিলুম বুদ্ধের পায়ে ধূলিকণায়
আমি ছিলুম সুজাতার পায়ে ধূলিকণায়
জন্ম পার হতে হতে বিশ্রামহীন
একা একা ঘোর অমাবস্যা।
দিগ্বিদিক বাতাস খেলা করে।
ওৎ পেতে থাকা আমার বাতাসে মিশে যাওয়া
তিরতির জলের মতন বয়ে যাওয়া।
এক একটা রাত
এক একটা রাত শুধুই নিজের জন্যে।
সে রাতে বন্ধ থাকে রেশন তোলা, পাতার ওপর থেকে
মুছে যায় জ্যোৎস্নার খুনসুটি,
উলঙ্গ আমি কোনো এক মহানীলের পথ ধরে
ফিরে আসি নিজের কাছে!
এক একটা রাতে মাতৃগর্ভে কেঁদে ওঠে
ভ্রূণ শিশু,
নিজের জন্যে নয়
আত্মবলয়ে ফিরে আসার ওই জন্মান্তর
তাকে কাঁদায়,
তাকে কাঁদায় সমুদ্রের কল্লোলের মতো
নষ্ট স্বপ্নের মতো
তবুও নির্ঘাত তাকে ফিরতেই হয়
ফেরাটাই নিয়ম…
এক একটা রাত জেগে থাকতে হয়
নিজের কুশপুত্তলিকায়
আগুন দেবার জন্যে…
ঘর
গাছের পাতারা ফিসফিস করে জানতে চায়:
কোথায় তোমার ঘর? হাজার বছরের ঘুম হঠাৎ ভেঙে
জড়ানো কণ্ঠে
বলতে চাই: তোমরাই তো আমার ঘর! চতুর্দিক খুব
শান্ত আর নিঝুম, কোনো শব্দও নেই কোথাও।
শুধু দেখি,
আমার ঘুমের বিছানার ওপর শুকনো পাতারা
ঝরে ঝরে পড়ছে…
শুকনো পাতাদের সঙ্গে ঘুম-ভাঙা আমিও
ঝরে পড়ছি,
উড়ে উড়ে যাচ্ছি
নতুন কোনো ঘরের সন্ধানে। কোথায় আমার ঘর?
মরুভূমিতে চিকচিক করে ওঠা বালি, তুমি কি
আমার ঘর? অন্ধ ভিখারির চোখে যুগান্তকালের
অন্ধকার
তুমি কি আমার ঘর? শুকনো পাতায় পাতায় আমি যে
আর উড়তে পারিনা কিছুতেই। ডানা ক্রমশ
ভারী হয়ে আসছে, আর চোখ দুটিও…
কোথায় আমার ঘর?
ওহে, তোমরা
কারবালার প্রান্তর থেকে যে বাতাস
ছুটে আসে লোকালয়ের দিকে, তার অন্তরে
পিপাসার আত্মা লেগে থাকে। সেই পিপাসায়
আমি তো সামান্য বারি, আমাকে খুন করতে পারো
এমন ছুরি তোমাদের হাতে নেই। আমাকে
শুষে নিতে পারো
এমন আলিঙ্গনও নেই তোমাদের!
ওহে তোমরা, পুরো আকাশ তোমাদের চোখে
বসিয়ে নেওয়ার আগে, আমার জন্যেও
দু-এক ফালি রেখো। কারবালার প্রান্তর থেকে
ছুটে আসা বাতাস
যেন সেই আকাশে বৃষ্টি ঝরাতে পারে।
আমাদের সব সকালবেলার গান
আমাদের সব বিকেলবেলার পথ
পিপাসায়, পিপাসায়…
অস্তিত্বের ক্ষত
ভেঙেচুরে প্রসারিত করেছি,
সেটুকুই উপহার দিয়ে যাব। অস্তিত্বের ক্ষত থেকে
জাগ্রত যে প্রদীপ
ঝড়কে শাসনে রাখে, তাকেও বলেছি—
প্রস্তুত হয়ে থাকো। কথা বলো, কথা বলো
লুপ্ত জনপদ। ভাসতে ভাসতে এই আমরাই একদিন
দাঙ্গাহীন সারিসারি শহর গড়ে দেব।
চতুর্থ পাথর
শেষ পর্যন্ত অন্তত চারটি পাথর হাতে থাকবে
আমার। তিনটির ব্যবহার আগেই জানা আছে,
অন্যটি নিয়ে কী করব ভাবতে ভাবতে দিন কেটে যায়
একসঙ্গে এত দিকে পাথর ছুঁড়তে হবে, কল্পনা করিনি
কখনো। তাহলে তো অনেক জমাতে পারতুম।
বিদ্যার বদলে
পাথর, নারীর বদলে পাথর, স্বর্ণমুদ্রার বদলে পাথর,
অজস্র জমিয়ে ফেলতুম। এখন এই পরিণত কালে
চতুর্থ পাথরটিকে নিয়ে কী প্রাণান্ত লড়াই,
তেমন কোনো জাদুমন্ত্র হাতে থাকলে,
এই একটিই ভেঙে
দশদিকে ছুঁড়তে পারতুম।
পাথর ছোঁড়াই ধর্ম আমাদের। নির্দেশ আছে,
অন্তত তিনটি
পাথর ছোঁড়ার কথা, তাও একদিকে। সে তো
সামান্য কাজ। এখন এই আধোঘুম কিংবা জাগরণে
চরাচর জুড়ে ভেসে উঠছে অজস্র ভূতুড়ে চোখ আর
আগুন। চতুর্থ পাথরটিকে আমি কোন দিকে ছুঁড়ব!