অবরোধের পর গাজায় সর্বাত্মক ‘আক্রমণে’ যাচ্ছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যোদ্ধাদের দখলে থাকা বিভিন্ন স্থান ও বসতির নিয়ন্ত্রণ পুনপ্রতিষ্ঠা করেছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) এক মুখপাত্র বলেছেন, তবে এখনও বিভিন্ন স্থানে হামাস যোদ্ধাদের উপস্থিতি থাকতে পারে। প্রধান সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, শনিবারের আকস্মিক হামলার পর ৩ লাখ রিজার্ভ সেনা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন তারা আক্রমণে যাচ্ছেন। সোমবার টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেছেন, আমরা এখন বিভিন্ন বসতিতে তল্লাশি ও শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, তাদের মূল মনোযোগ হলো সীমান্তের ইসরায়েল অংশ সুরক্ষিত করা। হামাস যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটানো। এরপর গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালানো হতে পারে।
হাগারি নিশ্চিত করেছেন, শনিবার শুরু হওয়া হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৮ শতাধিক। এদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৭৩ সদস্য রয়েছে। অপর দিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। আহতের সংখ্যা ২ হাজার ৭৫০ জনের বেশি।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা শতাধিক ইসরায়েলি বন্দিকে গাজায় নিয়ে গেছে। সোমবার সকালেও দক্ষিণ ইসরায়েলের কিব্বুৎজ এলাকায় জিম্মি দশার খবর পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া আশকেলন শহরেও রকেট ও কামানের গোলাবর্ষণ হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ডেরত শহরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলের আধাসামরিক বাহিনীর গোলাগুলি হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র লে. কর্নেল রিচার্ড হেখট বলেছেন, রবিবার রাতে শহরটিতে ৭০ হামাস যোদ্ধা সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।
রাফাতে একটি ভবনে কোনও আগাম সতর্ক সংকেত ছাড়াই বিমান হামলা চালিয়েছে ইসারয়েল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী হয়ত এখন আর সতর্ক সংকেত বাজিয়ে হামলা চালাবে না। এই বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কোনও মন্তব্য করেননি।
ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে গাজায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাদা ফসফরাস ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের বিষয়েও বাহিনীটির কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার সকালে আইডিএফ-এর আরেক মুখপাত্র জনাথন কনরিকাস বলেছিলেন, ইসরায়েলের পরিস্থিতি ভয়াবহ। ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্যতম খারাপ দিন। এর আগে কখনও এক দিনে এত ইসরায়েলি নিহত হননি। তিনি এই হামলাকে ৯/১১ ও পার্ল হারবরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
নির্দিষ্ট সংখ্যা না জানালেও কনরিকাস বলেছেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা ও বেসামরিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন সেনাবাহিনীর পাল্টা পদক্ষেপের দুটি প্রধান লক্ষ্য রয়েছে। যুদ্ধ শেষে হামাসের কোনও সামরিক সক্ষমতা থাকবে না, যা ইসরায়েলিদের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে এবং গাজা উপত্যকা শাসনের ক্ষমতা থাকবে না হামাসের।
সোমবার বিকালে গাজা উপত্যকায় ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। জ্বালানি-বিদ্যুৎ পরিষেবা এবং খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্ট বলেছেন, অধিকৃত হামাস গাজায় অবরোধের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। খাদ্যও ঢুকতে দেওয়া হবে না।
রাতে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় বিমান হামলার তীব্রতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাকে জানানো হয়েছে, বিমানবাহিনীর সব পাইলট এবং রিজার্ভ কর্মীরা দায়িত্ব পালনের জন্য রিপোর্ট করেছেন।
প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায়। ২০০৭ সাল থেকে উপত্যকাটিতে স্থল ও জলপথে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে চলতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের।