হামাস যোদ্ধারা কীভাবে ইসরায়েলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিল?
ইসরায়েলের হাতে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে অত্যাধুনিক, সক্রিয় ও চৌকস গোয়েন্দা দল, এতদিন ধরে প্রচলিত এ ধারণায় শনিবার রীতিমত চপেটাঘাত করেছে গাজার হামাস যোদ্ধারা।
শনিবার ভোরে গাজা থেকে ছোড়া একের পর এক রকেট ইসরালের দক্ষিণাঞ্চল ঝাঁজরা করে ফেলেছে। সেইসঙ্গে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের অত্যন্ত সুরক্ষিত সীমান্ত পেরিয়ে কাছের শহর এসদেরত, সীমান্তের কাছে বসবাস করা কমিউনিটি বে’রি এবং ওফাকিম শহরে রীতিমত হত্যাযজ্ঞ চালায়।
অথচ, হামাসের এই হামলা পরিকল্পনার বিষয়ে বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কেউ। “আমরা বুঝতেই পারছি না কীভাবে এমনটা ঘটলো।”
এভাবেই নিজেদের হতবিহ্বলতা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, শিন বেত ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দাদের কেউই ধারণা করতে পারেনি হামাস এ ধরণের একটি হামলা চালাতে যাচ্ছে। যেটা এমনকি সাধারণ ইসরায়েলিদের পক্ষেও অবাক করার বিষয়।
বিবিসি অবশ্য বলছে, এমনও হতে পারে গোয়েন্দাদের কেউ কেউ হয়তো সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য পেলেও পেয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলই তাদের গোয়ান্দা বাহিনীর পিছনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী, লেবানন, সিরিয়া ছাড়াও অন্যত্র তাদের গুপ্তচর ও তথ্যদাতা রয়েছে।
অতীতে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের হাতে গুপ্তহত্যার শিকার হতে হয়েছে। তারা যে নেতাকে লক্ষ্যবস্তু করতো তাদের সব ধরণের তথ্য, প্রতিটি চলাচল তাদের জানা থাকতো এবং তার উপর ভিত্তি করে সুবিধামত সময় ও জায়গায় চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে নেতাদের হত্যা করা হত। সম্প্রতি ইরানের প্রভাবশালী একজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার পেছনেও ইসরায়েলের গোয়েন্দারা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল তেহরান।
ইহুদিদের একটি অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য শনিবার ইসরায়েলে ছুটি ছিল। হামাস হামলার জন্য এই দিনটিকেই বেছে নেয়।
হামাস বলেছে, তারা ইসরায়েলে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে। ইসরায়েল থেকে অবশ্য আড়াই হাজার রকেট বিস্ফোরিত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সেগুলোর বেশিরভাগই আবাসিক এলাকায় আঘাত হেনেছে।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১০০ জন নিহত হওয়ার খবর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। প্রায় আটশ মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থায় গুরুতর। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের একটি মাত্র হামলায় ইসরায়েলে এত বেশি প্রাণহানির ঘটনা এটাই প্রথম।
সীমান্ত শহর এসদেরতে সড়কে, গাড়ির ভেতর, বাড়ির পাশে বা উঠানে বহু মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামাসের বন্দুকধারীরা বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনদের হত্যা করেছে।
হামাস ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেলসহ ৫৩ জনকে ‘যুদ্ধবন্দি’ করার দাবি করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী লোকজনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও জিম্মিদলে সেনাসদস্য আছে কিনা বা কত জনকে ধরে নিয়ে গেছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। শুধু বলেছে, জিম্মিদের উদ্ধারে লড়াই অব্যাহত আছে।