পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া পৌরশহরের ফেরী ঘাট এলাকার নদী পাড় পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার সরকারী খাসজমি দখল করে প্রকাশ্য দিবালোকে অবৈধ স্থাপনা তুললেও কোন অ্যাকশন নেই স্থানীয় প্রশাসনের।
এদিকে কলাপাড়া ফেরীঘাট এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে নদী পাড় পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার সরকারী খাসজমি দখল করে গত ক’দিন ধরে বেশ ক’টি স্থাপনা তুলছে ক’জন প্রভাবশালী।
ঘটনাস্থলে শনিবার স্থির চিত্র ধারনের পর তাদের বক্তব্য, কি হবে ফালতু ঘর নির্মানের ছবি তুলে ও লিখে, সব ম্যানেজ।
এভাবে প্রভাবশালীদের খাস জমি দখলের প্রবনতা বাড়ায় হাত ছাড়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারী জমি।
কালে ভদ্রে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আই ওয়াশমূলক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দু’একটি অভিযান পরিচালিত হলেও অধিকাংশ সময় রহস্যজনক ভাবে তাদের দেখা যায় নিরব ভূমিকায়।
কেননা দখল দৌরাত্ম্যে যারা জড়িত তারা কেউ চুনোপুটি নয়, তাই তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারে না স্থানীয় প্রশাসন।
কলাপাড়া পৌরশহরের বড় কলবাড়ী এলাকা থেকে ফেরীঘাট চৌরাস্তা, হ্যালি প্যাড, লঞ্চঘাট, বাদুরতলি হয়ে বালিয়াতলি খেয়াঘাট পর্যন্ত পাউবো’র কয়েক কিলোমিটার ওয়াপদা সড়কের দু’পাশে আধা-পাকা বা পাকা স্থাপনা তুললেও প্রভাবশালীদের দখল থেকে অদ্যবধি কোন সরকারী জমি উদ্ধার করতে পারেনি পাউবো কর্তৃপক্ষ।
কোটি কোটি টাকার এ সম্পত্তিতে প্রভাবশালীরা স্থাপনা তুলে লক্ষ লক্ষ টাকা অগ্রিম ও মাসিক হাজার হাজার টাকা ভাড়া পেলেও সিকি আধুলিও রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার এ থেকে।
বছর কয়েক আগে পাউবো কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা অপসারনে দখলদারদের উচ্ছেদ নোটিশ দিলেও তাও এগোয়নি বেশীদূর।
এছাড়া শহরের অভ্যন্তরে প্রভাবিত সরকারী খালের দু’পাড়ে প্রভাবশালীদের হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা দৃশ্যমান থাকলেও তা চোখে পড়ছেনা স্থানীয় প্রশাসনের।
তবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত না করার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলছে পৌর প্রশাসন।
চিংগড়িয়া খালের দু’পাড়ের অবৈধ দখল উচ্ছেদে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’ উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করার পর স্থানীয় ভূমি প্রশাসন নোটিশ ইস্যু করে দখলদারদের।
এরপর এক প্রভাবশালী কলাপাড়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে প্রশাসনকে বিবাদী করে মামলা করায় আর এগোয়নি এটি।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মামলাটি ঝুলে আছে, অদ্যবধি নিস্পত্তি হয়নি।
রাষ্ট্রের সকল ভাতাদি ভোগ করার পরও রাষ্ট্রের পক্ষে রহস্যজনক ভাবে কথা বলছেননা সরকারী কৌশুলী।
উপজেলা লঞ্চঘাট সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীর পাড় বেদখল হয়ে ভবন উত্তোলনের পর দখলদারদের নোটিশ ইস্যু করেও টিকিটিও ছুঁতে পারেনি ভূমি প্রশাসন।
এনিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলে শোনা যায়, তারা এ বিষয়ে অবগত নন। কেউ তাদের জানায়নি।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র স্থানীয় নেট মেম্বর ও কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মেজবাহ উদ্দীন মাননু বলেন, ’নদী, খাল দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। এটি আমরা বলে আসছি এবং এখনও এ দাবী জানাচ্ছি। নতুবা নদী কেন্দ্রিক আমাদের যে সভ্যতা রয়েছে তা হারিয়ে যাবে।’
কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ’পৌরশহরের অভ্যন্তরে প্রবাহিত খালের দু’পাড় দখল মুক্ত করার বিষয়টি আমার নির্বাচনী প্রচারনার অঙ্গীকার ছিল। যেকোন মূল্যেই খাল দখলদার মুক্ত করা হবে। তাতে যত বাঁধাই আসুক।’
পাউবো’র কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী হালিম সালেহী পটুয়াখালীতে আছেন এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহেরাজ প্রধান প্রকৌশলী’র সাথে স্পীড বোটে বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আছেন বলে এ নিয়ে কোন
বক্তব্য দেননি।
কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, ’ভূমি প্রশাসন ও পাউবো থেকে যেসব দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে ইতোপূর্বে নোটিশ করা হয়েছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উচ্ছেদ পরিচালনায় কেস নথি হিসেবে তৈরী করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে উচ্ছেদ পরিচালনায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ স্থাপনা অপসারন করা হবে।’
নতুন করে ফেরীঘাট এলাকায় নদীরপাড় পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় স্থাপনা তুলে অবৈধ দখল বিষয়ে তিঁনি বলেন, ’আমি এটি অবগত নই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’