রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহরের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইউক্রেনের
রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহরের শীর্ষ কমান্ডারসহ আরও ৩৩ জন কর্মকর্তাকে হত্যার দাবি করেছে ইউক্রেন। গত সপ্তাহে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেভাস্তোপোলে রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর নৌবহরের সদরদপ্তরে ইউক্রেন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এবং ওই হামলাতেই তারা প্রাণ হারান বলে দাবি করেছে কিয়েভ।
অবশ্য ইউক্রেনের এই দাবি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেনি রাশিয়া। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেভাস্তোপল বন্দরে রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের সদর দপ্তরে গত সপ্তাহে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্রিমিয়ায় মস্কোর শীর্ষ অ্যাডমিরালসহ আরও ৩৩ জন অফিসারকে তারা হত্যা করেছে বলে ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী সোমবার জানিয়েছে।
ইউক্রেনের দাবি, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের কমান্ডার অ্যাডমিরাল ভিক্টর সোকোলভ নিহত হন। অবশ্য ইউক্রেনীয় হামলায় রাশিয়ার অন্যতম ঊর্ধ্বতন এই নৌ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন কিনা রয়টার্স তা জানতে চাইলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে তথ্যটি নিশ্চিত বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি।
এর আগে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেভাস্তোপলে অবস্থিত রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে গত শুক্রবার অন্তত একটি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে বলে স্থানীয় গভর্নর মিখাইল রাজভোজায়েভ টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে জানিয়েছিলেন।
সেসময় তিনি সাধারণ মানুষকে শহরের কেন্দ্রস্থলটি এড়িয়ে চলতে অনুরোধ জানান এবং দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে কাজ করার পাশাপাশি আশপাশের কিছু রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন।
মূলত ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। গত বছর ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর এই অঞ্চলটি ইউক্রেনীয় আক্রমণের শিকার হতে শুরু করে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের হামলা ও হামলার চেষ্টা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রয়টার্স বলছে, সেভাস্তোপলে মস্কো-নিযুক্ত কর্তৃপক্ষ ক্রিমিয়াতে ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান আক্রমণ মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল থেকে ১৯ মাস-ব্যাপী যুদ্ধে ইউক্রেনে বহুবার বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
আর সেখানেই ইউক্রেনের হামলায় রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ এই অ্যাডমিরালের নিহত হওয়ার বিষয়টি যদি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে সোকলভের হত্যাকাণ্ডটি হবে ক্রিমিয়ার ওপর ইউক্রেনীয় বাহিনীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে একটি।
টেলিগ্রাম অ্যাপে দেওয়া বার্তায় ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী বলেছে, ‘রাশিয়ান ব্ল্যাক সি ফ্লিটের সদর দপ্তরে হামলার পর রাশিয়ান কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহরের কমান্ডারসহ ৩৪ জন অফিসার মারা গেছে। হামলায় আরও ১০৫ জন দখলদার আহত হয়েছে। হামলার পর সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত এই ভবনটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়নি।’
অবশ্য ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী কিভাবে হামলায় নিহত ও আহতদের সংখ্যা গণনা করেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার নয়। তবে রয়টার্স স্বাধীনভাবে ইউক্রেনের এই দাবি যাচাই করতে পারেনি।
মূলত টানা ১৯ মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই দুটি পক্ষই কখনও কখনও যুদ্ধে শত্রুর ক্ষয়ক্ষতিকে অতিরঞ্জিত করেছে এবং নিজেদের ক্ষতির কথা খুব কম করে উল্লেখ করছে।
অন্যদিকে হামলার পর এক বিবৃতিতে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনীয় সেই হামলার পর তাদের একজন সেনা সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও আগে দেওয়া বিবৃতিতে এক সেনার নিহতের কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী মোট পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে বলেও মন্ত্রণালয় জানায়।
রয়টার্স বলছে, ইউক্রেন কৃষ্ণসাগর ও ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে আক্রমণ বাড়িয়েছে এবং আক্রমণকারী ড্রোন ছাড়াও এসব হামলায় ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার শুরু করেছে। কিয়েভ বলেছে, কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ান নৌবহর ধ্বংস করা চলমান যুদ্ধের সমাপ্তিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত করবে।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, ইউক্রেন ১০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহরের নেভাল শিপইয়ার্ডে হামলা করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। অবশ্য সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে রাশিয়া ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নিলেও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মস্কোর সেই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি।
এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন।