অস্ত্র জমা দিচ্ছে আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা, দেখা দিচ্ছে মানবিক সংকট
আজারবাইজানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র জমা দেওয়া শুরু করেছে নাগর্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গত মঙ্গলবার নাগর্নো-কারাবাখে আজারবাইজানের ঝটিকা সেনা অভিযানের ২৪ ঘণ্টার মাথায় রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আত্মসমর্পণ করে আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
মস্কো জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা শুক্রবার প্রথম অস্ত্র সমর্পণ করেছে। রুশ শান্তিরক্ষী বাহিনী এই সপ্তাহে সংকট সমাধানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে শোনা যাচ্ছে। এদিকে নাগার্নো-কারাবাখের বেসামরিক মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। কারণ, এই অঞ্চলের বেসামরিক নাগরিকদের দুর্দশা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ক্রমাগত বাড়ছে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর নাগার্নো-কারাবাখ সংঘর্ষ কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের বিদ্রোহীরা প্রায় তিন দশক ধরে সংঘর্ষে লিপ্ত। অঞ্চলটিতে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। এটি দক্ষিণ ককেশাসের একটি ছিটমহল। যা আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের স্বীকৃত। কিন্তু ১৯৯৪ সাল থেকেই এই অঞ্চল জাতিগত আর্মেনীয়দের দখলে ছিল। উভয় পক্ষের দ্বন্দে একটি নতুন শরণার্থী সংকটের শঙ্কা জেগেছে এখন।
শুক্রবার রাজধানী ইয়েরেভানে সরকারী বৈঠকের সময় আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, আর্মেনিয়া বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী জাতিগত আর্মেনিয়ানদের স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু ব্যাপক পুনর্বাসন তখনই ঘটবে, যখন কারাবাখে আর্মেনীয়দের থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগার্নো-কারাবাখ থেকে আর্মেনিয়ায় প্রবেশের একমাত্র পথ লাচিন করিডোর। এই পথ পুনরায় চালু করার জন্য আজারবাইজানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে, যেনও সবাই চলাচল করতে পারে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনে আজারবাইজানের সঙ্গে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আলোচনা চলছে। তিনি আরও বলেছেন, নাগর্নো-কারাবাখ থেকে নাগরিকদের প্রবেশাধিকার নিয়েও কথা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) ও অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারসহ আরও সংগঠন কারাবাখের মানুষের দুর্দশার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, আজারবাইজানীয় বাহিনীর এই সপ্তাহ ঝটিকা আক্রমণ চারায়। ফলে বিরোধপূর্ণ ছিটমহলে বিদ্যুৎ অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হাজারো জাতিগত আর্মেনিয়ান।
বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের এক মুখপাত্র আরমাইন হায়রাপেটিয়ান শুক্রবার বলেন, স্টেপানাকার্ট শহরের সাধারণ মানুষ ভবনের নিচে লুকিয়ে ছিল। আজারবাইজানের বাহিনী উপকণ্ঠে ক্যাম্প করেছিল। সেখানে পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ ছিল।
এএফপির একজন সাংবাদিক বলেছেন, আতঙ্কিত জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির অভাব দেখা দিয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষ আশেপাশের গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছেন।
শোলজের মুখপাত্র স্টেফেন হেবেস্ট্রিট বিবৃতিতে বলেছেন, শুক্রবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ পাশিনিয়ানের সঙ্গে ‘সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের নিয়ে কথা বলেছেন। কারাবাখ মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র: গার্ডিয়ান