শুধু আকাশে নয়, রামধনু যে মাটিতেও দেখা যায় তার প্রমাণ উত্তর-পশ্চিম চিনের গানসু প্রদেশের লিনজে জেলায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। এখানে রয়েছে রেনবো মাউন্টেন, যাকে সোজা বাংলায় বলা যায়— রামধনু পাহাড়।
এখানে এলেই পর্যটকদের চোখ ধাঁধিয়ে যায় গোটা পাহাড়টার গায়ে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, আকাশি আর বেগুনি রঙের বাহার দেখে। মনে হয়, কোনও শিল্পী বুঝি সাতটি রঙের তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে দিয়েছেন গোটা অঞ্চল। সাতটি রং থাকলেও পাহাড়টির প্রাথমিক গায়ের রং কিন্তু লালই।
ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, এই রঙিন পাহাড় তৈরি হতে সময় লেগেছে ২৪ মিলিয়ন বছর। মানে প্রায় ২ কোটি ৪ লক্ষ বছর। তাঁদের ধারণা, টেকটনিক প্লেট সরে যাওয়ার ফলেই মাটির অতল থেকে বেরিয়ে এসেছিল শিলাস্তর। সেই শিলাস্তরগুলো জমাট বেঁধেই তৈরি হয়েছে এই পাহাড়ের খাড়াইগুলো।
সেই শিলাস্তরের সঙ্গে মিশে ছিল প্রচুর পরিমাণে রঙিন সিলিকা, লোহা, তামা আর বিভিন্ন রঙের খনিজ পদার্থ। সেই রংগুলোর জন্যই এই রঙিন দুনিয়া তৈরি হয়েছে।
এই পাহাড়টি মূলত বেলেপাথরে তৈরি। হিমালয় গড়ে ওঠার অনেক আগে থেকেই এই পাহাড়ের সূচনা হয়েছিল।
এই বাহারি রঙের সৌন্দর্যের জন্যই এই পাহাড়ের সারিটি আজ একটি জনপ্রিয় পর্যটককেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বিশ্বের বিস্ময় এই রামধনু পাহাড়ের পোশাকি নাম— ঝাংগিয়ে ড্যানজিয়া ল্যান্ডফর্ম। এটি একটি জিওগ্রাফিক্যাল পার্কের অংশ। আগে এই পার্কটির নাম ছিল— ঝাংগিয়ে ড্যানজিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওগ্রাফিক্যাল পার্ক। এখন এর নাম হয়েছে— গানসু ঝাংগিয়ে ন্যাশনাল পার্ক।
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ঝড়,বৃষ্টি, তুষারপাত, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যের তাপ, জলবায়ু পরিবর্তন ও নানা রাসায়নিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে গড়ে উঠেছে আজকের এই সাতরঙা পর্বত শ্রেণি। শুধু রঙের বৈচিত্রই নয়, পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এখানকার বিভিন্ন আকৃতির পাথরও। তবে এখান থেকে এক টুকরো রঙিন পাথর নিয়ে যাওয়াও আইনত দণ্ডনীয়। এখানকার আরেকটি দর্শনীয় জিনিস হল বিশালা বিশাল প্রাকৃতিক পিলার।
তবে এই এলাকায় কিন্তু ঘাস ছাড়া অন্য আর কোনও গাছপালা বা প্রাণীর দেখা মেলে না। এর একটা কারণ সম্ভবত এখানকার অত্যন্ত রুক্ষ ও শুষ্ক আবহাওয়া। শুধু এই পাহাড়টির আশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যেই এই রামধনু পাহাড়টিকে ২০১০ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো।