স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাসে যাত্রী তোলার প্রতিবাদ করায় শিশুসহ একই পরিবারের চারজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বরিশাল নগরের রুপাতলী বাস টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে।
যাত্রীকে সপরিবারে মারধরের পর বাসটি (গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো ব-১৪৪৯৯৮)স্ট্যান্ড ছেড়ে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নিয়ে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে শ্রমিক নেতারা ওই যাত্রীদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়ে মারধরের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা চালান।
এ বিষয়ে রুপাতলী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, যতটুকু জেনেছি যাত্রীর সঙ্গে তর্কাতর্কি বাসস্ট্যান্ডে হয়েছে। তবে মারধরের ঘটনা স্ট্যান্ডের বাইরে সড়কে হয়েছে।
বাসটি ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির হওয়ায় তাদের বিষয়টি জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে শিপন জানান ।
মারধরের শিকার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদ সিকদারের ছেলে শিকার শামীম সিকদার (২৭) জানান, তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে বরিশাল নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালিজিরা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি তার মা হাসনুর বেগম, ভাগ্নে-বৌ কারিমা ও ভাগ্নের সাত বছরের শিশুকন্যা মুনিয়াকে নিয়ে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে জনপ্রতি ২৪০ টাকা দিয়ে প্রতিটি টিকিট কাটেন এবং বাসে ওঠেন।
কিন্তু নিয়মানুযায়ী বাসের প্রতি দুই আসনের একটি খালি রাখার কথা থাকলেও সুপারভাইজর কোনো সিটই খালি রাখেননি। পাশাপাশি যাত্রীদের দাঁড় করিয়েও নিচ্ছেন।
কিন্তু দেড়শ টাকা ভাড়ার স্থলে ২৪০ টাকা নিয়ে এভাবে ঝুঁকিতে যাত্রী পরিবহন করার প্রতিবাদ করলে সুপারভাইজর ক্ষিপ্ত হন।
শামীম সিকদার আরো বলেন, মুহূর্তের মধ্যে সুপারভাইজর, হেলপারসহ বাসস্ট্যান্ডের ১৫/২০ জন শ্রমিক মিলে বাসের সিটেই আমাকে মারধর করে।
আমাকে বাঁচাতে গেলে শ্রমিকরা আমার মা, ভাগ্নে বৌ কারিমাকে লাঞ্ছিত ও হেনস্তা করেন। ভাগ্নের সাত বছরের মেয়ে মুনিয়াকে হেলপার বাস থেকে ছুড়ে নিচে ফেলে দেয়।
যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির মাহিম পরিবহনের (গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো ব-১৪৪৯৯৮) সুপারভাইজর মুন্নার নেতৃত্বে ব্যাপক মারধর করা হয়।
যাত্রী মারধরে শুধু ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির শ্রমিকরাই নয় রুপাতলী বাস মালিক সমিতির শ্রমকিরাও অংশ নেন।
রুপাতলী বাস মালিক সমিতির লাইন বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন শামীম বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি এবং মারধরের শিকার যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
তবে যাত্রী শামীম সিকদার জানান, তাকে কোনো ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়নি, শুধু শ্রমিকদের হামলায় তার ছিঁড়ে যাওয়া পোশাক কিনে দিয়ে মারধরের দাগ ঢাকার চেষ্টা করেছেন শ্রমিক নেতারা। তিনি কোনো বিচারই পাননি, পুলিশ এসেও কিছু করেনি।
বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও তারা ঘটনাটি দেখেনি বলে দাবি করেছেন।
মিজান বলে পরিচয় দেয়া এক কনস্টেবল বলেন, ‘আহত যাত্রীদের অভিযোগ শুইনা আমরা স্পটে গেছিলাম। কিন্তু বাস বা বাসের কাউকেই আমরা পাই নাই।’
বরিশাল কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ন বলেন, ‘খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি, বাসটিকেও পাওয়া যায়নি।’
এ বিষয়ে ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
৫ এপ্রিল থেকে লকডাউনের শুরুতে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পরে প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী বহনের শর্তে চালু করা হয়। আর মালিক-শ্রমিকদের যেন লোকসান না হয়, সে জন্য ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়।
প্রথমে চালু করা হয় জেলার ভেতরে বাস। আর ঈদের পর আন্তজেলা বাসও চালু করা হয়।
আন্তজেলা বাস যখন বন্ধ ছিল, তখন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করে বাস রাস্তায় নামার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান।
কিন্তু যেদিন থেকে বাস চালু হয়, সেদিন থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া নিলেও প্রতি আসনেই যাত্রী নেয়ার অভিযোগ আছে। শুরুতে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা না হলেও পরে দাঁড়িয়েও নেয়া হয়।
এ নিয়ে পুলিশ বা সড়ক পরিবহন সংস্থা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে- এর প্রমাণ নেই।
বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার জাকির আলম মজুমদার বলেন, ‘পুলিশের তদারকি রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’