প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত: যা যা জানা গেছে
মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী যে ব্যক্তিগত বিমানটি রাশিয়ার তিভিয়ের অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে, তাতে ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ছিলেন বলে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কুশিওনকেনা গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির ১০ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন।
বিমানটির যাত্রীদের মধ্যে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন ও তার প্রধান সহচর দিমিত্রি ইউতকিন ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন তারা; খবর বিবিসির।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উত্তরে বিধ্বস্ত হওয়া এই বিমানটির যাত্রীদের মধ্যে প্রিগোজিনের নাম থাকার কথা আগেই নিশ্চিত হয়েছিল।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্রদের একজন ছিলেন প্রিগোজিন। ২০২২ সালে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করার পর প্রিগোজিনের বেসরকারি সামরিক কোম্পানি যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
কিন্তু চলতি বছরের জুনে রাশিয়ার সামরিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রিগোজিন তার সেনাদের মস্কো যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এতে পুতিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়। প্রিগোজিনের ওই বিদ্রোহ ২৪ ঘণ্টারও কম সময় ধরে চলেছিল।
প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত হওয়া সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে তা বিবিসির ভাষ্য অনুযায়ী তুলে ধরা হল।
বিমানটির কী হয়েছিল?
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এমব্রায়ার লিগ্যাসি বিমানটি মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মস্কোর উত্তরে তিভিয়ের অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে।
কিন্তু ওয়াগান গ্রুপের টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ওই বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে; যদিও তারা তাদের দাবির বিষয়ে কোনো প্রমাণ হাজির করেনি।
ওই বিমানটিতে সাত যাত্রী ও তিন ক্রু ছিলেন। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, তারা সবাই নিহত হয়েছেন। সব মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রিগোজিনের একটি কোম্পানির নামে নিবন্ধিত লিগ্যাসি বিমানটি উড্ডয়নের পর আকাশে আধ ঘণ্টারও কম সময় ছিল বলে জানা গেছে। বিমানটি ভূমিতে পড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার সময় এটিতে আগুন ধরে যায়।
বিবিসির যাচাই করা ভিডিও ফুটেজে একটি বিমানকে রাশিয়ার কুশিওনকেনার আকাশ থেকে পড়তে দেখা গেছে।
প্রিগোজিনের মালিকানাধীন দ্বিতীয় আরেকটি বাণিজ্যিক জেট বিমান নিরাপদে মস্কোতে অবতরণ করেছে বলে গ্রে জোন জানিয়েছে।
বিমানটিতে কারা ছিলেন?
রাশিয়ার কুশিওনকেনা গ্রামের কাছে যে ব্যক্তিগত বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তাতে সাত যাত্রী ও তিন ক্রু ছিলেন।
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ওই সাত যাত্রীকে শনাক্ত করেছে। তারা হলেন, ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, তার প্রধান সহচর দিমিত্রি দিমিত্রি ইউতকিন, সের্গেই প্রপুস্টিন, ইয়েভজেনি মাকারান, আলেকসান্দার ততমিন, ভ্যালেরি চেকালভ এবং নিকোলাই মাতুসিয়েভ।
ক্রু সদস্যরা হলেন ক্যাপ্টেন আলেক্সি লেভশিন, সহ-পাইলট রুস্তাম কারিমভ এবং ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ক্রিস্তিনা রাসপোপোভা।
প্রিগোজিনের সাম্প্রতিক তৎপরতা সম্পর্কে আমরা কী জানি?
ধারণা করা হচ্ছে, মস্কোর প্রায় ৬০ মাইল উত্তরে বিমানটি যখন বিধ্বস্ত হয় তখন এটি রাশিয়ার রাজধানী থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে ছিল।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বল্পস্থায়ী ওই বিদ্রোহের পর থেকে প্রিগোজিন প্রচার প্রচারণা এড়িয়ে চলছিলেন। ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক নেতৃবৃন্দের গ্রহণ করা কৌশলে তিনি বিরক্ত ছিলেন, এই বিরক্তিই তাকে বিদ্রোহের পথে নিয়ে গিয়েছিল।
বিদ্রোহ শেষ করতে করা চুক্তি অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়া হয় এবং তিনি বেলারুশে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি তাই করেছিলেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে, যদিও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এবং তার নিজের শর্ত অনুযায়ী।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি টেলিগ্রাম চ্যানেলে আসা এক ভিডিওতে দেখা যায়, প্রিগোজিন তার যোদ্ধাদের বেলারুশে স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু ওই মাসেরই শেষ দিকে, তাকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলন চলাকালে দেখা যায়।
বিদ্রোহের পর থেকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা গত সপ্তাহের এক ভিডিওতে তাকে দেখা যায়, তাতে তিনি আফ্রিকায় আছেন বলে ধারণা দেন। তবে ভিডিওটি কোথায় গ্রহণ করা হয়েছে বিবিসি তা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।
তিনি মারা গেছেন, গ্রে জোন এমনটি জানানোর পর রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তিভিয়ের অঞ্চলে বিধ্বস্ত একটি বিমানের যাত্রী তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা ওই বিমানে ছিলেন বলে নিশ্চিত করে তারা। এ তালিকায় প্রিগোজিনের নামও আছে।
এখন কী ঘটছে?
রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির ভাষ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ক ২৬৩ ধারা অনুযায়ী এই বিমান বিধ্বস্তের কারণ নির্ধারণে একটি অপরাধ তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আইনের এই ধারাটি নিরাপদ যান ও বিমান চলাচল সম্পর্কিত।
ইতোমধ্যে দেশটির জরুরি পরিষেবা বিমানটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে তাদের অনুসন্ধান সম্পন্ন করেছে।
তিভিয়ের অঞ্চলের গভর্নর ইগর রুদেনিয়া এই ঘটনা তদন্তের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।