রাশিয়ায় ব্যর্থ বিদ্রোহের পর প্রথম ভিডিওতে প্রকাশ্যে প্রিগোজিন
রাশিয়ায় এক ব্যর্থ বিদ্রোহের পর থেকে উধাও ছিলেন ভাড়াটে যোদ্ধাদের গ্রুপ ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। ঠিক দুমাস পর প্রথমবার ভিডিও বার্তায় প্রকাশ্যে এলেন তিনি।
ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে, তিনি আফ্রিকায় রয়েছেন। তবে ভিডিওটি ঠিক কোথায় ধারণ করা হয়েছে, সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি বিবিসি।
ওয়াগনার গ্রুপের টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে প্রিগোজিনকে দেখা যাচ্ছে যুদ্ধের সাজপোশাকে। তাকে বলতে শোনা যায়, আফ্রিকাকে তারা ‘আরও মুক্ত’ করছেন।
বিভিন্ন দেশের জন্য ভাড়াটে হয়ে কাজ করা এই মিলিশিয়া বাহিনীর হাজারো যোদ্ধা আফ্রিকা মহাদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। সেখানে তাদের লাভজনক ব্যবসায়ীক স্বার্থ রয়েছে।
প্রিগোজিনের সৈন্যরা মালি ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এসব দেশে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলছে জাতিসংঘসহ মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ওয়াগনারের দুই প্রধানের ওপর গত মাসে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাজ্য। তাদের বিরুদ্ধে সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ করেছে দেশটি। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, আফ্রিকায় অবৈধ সোনার ব্যবসার মাধ্যমে ওয়াগনার যোদ্ধারা টাকা কামাচ্ছে।
সর্বশেষ ভিডিও বার্তায় প্রিগোজিনকে বলতে শোনা যায়, ইসলামি জঙ্গিসহ অন্যান্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি ওয়াগনার খনিজ অনুসন্ধান করছে।
“আমরা কাজ করছি। তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি। ওয়াগনার পিএমসি অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছে, সব মহাদেশে রাশিয়াকে আরও মহান করে তুলছে এবং আফ্রিকাকে আরও মুক্ত করে তুলছে।”
জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসআইএস ও আল-কায়েদাসহ অন্যন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা জানান ওয়াগনার প্রধান।
“আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রশান্তি আর ন্যায়বিচার। আমরা আইএসআইএস, আল-কায়েদা ও অন্যান্য দুস্যদের জীবনকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করছি।”
আফ্রিকা অঞ্চলে ওয়াগনার আরও সদস্য নিয়োগ করছে এবং তাদের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পূর্ণ করা হবে জানিয়ে প্রিগোজিন বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমরা সফল হব’।
এর আগে গত মাসে আফ্রিকা-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের সময় সেন্ট পিটার্সবার্গে ক্যামেরায় ধরা পড়েছিলেন প্রিগোজিন। ওই ছবিতে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত ফ্রেডি মাপোকার সঙ্গে তাকে করমর্দন করতে দেখা যায়।
গত জুনের শেষভাগে মস্কোতে স্বল্প সময়ের বিদ্রোহের পর থেকে আড়ালেই থাকছেন রাশিয়ার কুখ্যাত ভাড়াটে যোদ্ধাদের নেতা প্রিগোজিন। ওই বিদ্রোগে ৫ হাজার যোদ্ধাসহ সাঁজোয়া যানের বহর মস্কো অভিমুখে পাঠিয়েছিলেন তিনি।
প্রিগোজিনের বাহিনী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মস্কোর ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত ঘটনা বেশি দূর গড়ায়নি। ক্রেমলিনের সঙ্গে সমঝোতার পর ওয়াগনারপ্রধান বিদ্রোহে ক্ষান্ত দেন এবং সৈন্যদের ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
ওই ঘটনা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এমন জায়গায় ঠেলে দিয়েছিল যে, তিনি তার একসময়ের মিত্র প্রিগোজিনকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ দায়েও অভিযুক্ত করেন; ওই সশস্ত্র বিদ্রোহকে বর্ণনা করেন ‘রাশিয়ার পিঠে ছুরিকাঘাত’ হিসেবে।
অন্যদিকে প্রিগোজিন তার বিদ্রোহকে অভ্যুত্থান নয়, বরং ‘ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তবে সে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত তার সমাপ্তি হয় খুব দ্রুত।
ক্রেমলিনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে প্রিগোজিনকে বেলারুশে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই আলোচনায় মধ্যস্থতা করেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কো।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে লড়ছে অনেক ওয়াগনার যোদ্ধা। সেখানেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের শুরু হয়। ইউক্রেইনে ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধাদের পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েক মাস ধরেই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছিল প্রিগোজিনকে।
এরপর প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন ইউক্রেইনে যুদ্ধরত সব ভাড়াটে গোষ্ঠীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসতে বলেন, তখনই প্রিগোজিন তা প্রত্যাখ্যান করেন। সামরিক বাহিনীর অধীনে তার বাহিনী ঢুকে পড়লে, তার প্রভাব যে খর্ব হবে তা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি।
ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তাকে ‘পুতিনের শেফ’ নামেও ডাকা হয়, কারণ তিনি ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ করতেন।
২০১৪ সালে ওয়াগনার প্রতিষ্ঠার পর ওই বছরেই তাদের প্রথম অপারেশন ছিল ক্রাইমিয়া দখলে রাশিয়াকে সাহায্য করা। ইউক্রেইন যুদ্ধের আগে ওয়াগনারের সদস্য ছিল ৫ হাজারের মত, যাদের বেশিরভাগই রাশিয়ার অভিজাত স্পেশাল ফোর্সের সদস্য।
তবে গত জুনে প্রিগোজিন জানিয়েছিলেন, ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর ওয়াগনারের সদস্য বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার।