পাকিস্তানে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী কাকার
পাকিস্তানে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বালোচিস্তান প্রদেশের স্বল্প-পরিচিত সেনেটর আনোয়ারুল হক কাকার।
কয়েক সপ্তাহব্যাপী আলোচনার পর তার নিয়োগের ব্যাপারে একমত হয়েছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজ। তার মনোনয়ন কিছুটা “বিস্ময় সৃষ্টি করেছে” বলে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে আভাস দেয়া হয়।
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দেবার তিন দিন পর শনিবার এ মতৈক্য হয়। আনোয়ারুল হক কাকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি কেয়ারটেকার সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
আনোয়ারুল হক কাকার হচ্ছেন বালোচিস্তান আওয়ামী পার্টি নামে একটি দলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।
পাকিস্তানের দি ডন পত্রিকার এক রিপোর্টে ৫২ বছর বয়স্ক মি. কাকারকে ‘সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য’ এবং তার দল বালোচিস্তান আওয়ামী পার্টির প্রতি ‘এস্টাব্লিশমেন্টেরও সমর্থন’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
দেশটির আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হবার কথা তবে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বলেছে, দেশটির সবশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী কিছু আসনের সীমানা নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে – যেকারণে নির্বাচন বিলম্বিত হবার সম্ভাবনা আছে।
“সামরিক এস্টাব্লিশমেন্টের ঘনিষ্ঠ?”
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মি. কাকারের নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত এবং বর্তমানে কারারুদ্ধ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের সাবেক নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, মি. কাকার ‘এস্টাব্লিশমেন্টের ঘনিষ্ঠ’ এবং মনে হচ্ছে, তারা এমন একজনকে পেয়েছে যিনি রাজনীতিকদের চাইতে তাদের স্বার্থের দিকেই বেশি নজর রাখবেন।
পাকিস্তানের দি ডন পত্রিকা আরো দু’জন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছে যাতে মি. কাকারকে ‘সামরিক এস্টাব্লিশমেন্টের ঘনিষ্ঠ’ এবং ‘পাকিস্তানের রাজনীতিতে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে অক্ষম’ বলে বর্ণনা করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মি. কাকার সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারেন কিনা এবং আইএমএফের দৃষ্টিভঙ্গী অনুসরণ করেন কিনা – সেটাই হবে তার আসল পরীক্ষা।
সম্প্রতি পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতি, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা, গ্রেফতার ও রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশটির রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন ও বিক্ষোভ হয়েছে।
মি. খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন, তবে গত বছর সংসদে এক অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান। তিনি তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সেদেশে অত্যন্ত ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেন।
কে এই আনোয়ারুল হক কাকার
আনোয়ারুল হক কাকার একজন পাশতুন এবং তার জন্ম বালোচিস্তানের আফগান-সীমান্তবর্তী কিলা সাইফুল্লাহ জেলায়।
তিনি কোন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসেননি, তবে তার কিছু আত্মীয়স্বজন অতীতে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেছেন।
মি. কাকার নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রথম অবতীর্ণ হন ২০০৮ সালে – পাকিস্তান মুসলিম লিগ কায়েদে আজম গ্রুপের হয়ে, তবে সে নির্বাচনে তিনি হেরে যান। পরে তিনি নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লিগে যোগ দেন। এর পর ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বালোচিস্তান সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছিলেন।
তিনি প্রথম সেনেটর নির্বাচিত হন বালোচিস্তান থেকে একজন স্বতন্ত্র সেনেটর হিসেবে ।
বালোচিস্তান আওয়ামী পার্টির প্রতিষ্ঠার পর ২০১৮ সালে তিনি সেনেটে এই দলের পার্লামেন্টারি নেতা হন।
বালোচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক মি. কাকার যুক্তরাজ্যে আইন পড়তে গেলেও ডিগ্রি না নিয়েই দেশে পিরে আসেন। তিনি ইংরেজি, ফারসি, উর্দু ও পশতো সহ বেশ কিছু ভাষা জানেন।