পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে?
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এ বছর দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান। কিন্তু তাতে তার জনপ্রিয়তা কমেছে বলে প্রতীয়মান হয় না। তবে দৃশ্যপট এবার ভিন্ন।
তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৩ বছরের জন্য কারাগারে তিনি। ফলে আগামীতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্ব মহলে। তিনি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কিনা! কি অপেক্ষা করছে তার জন্য।
গত ৯ মে এবং ৫ আগস্টে গ্রেফতার হন তিনি। এই দুই সময়ের ব্যবধান খুব একটা দূরত্ব না হলেও এবারের গ্রেফতারে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। গতবার গ্রেফতারও হওয়ায় তাৎক্ষণিক জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখায় তার সমর্থকরা। জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচিতে অশান্ত হয়ে উঠে পাকিস্তান। আগুন দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর অবকাঠামোয়। এসব ঘটনায় কারাগারে যেতে অনেক সমর্থককে। এমন সমর্থন সাহস জুগিয়েছিল ইমরানকে।
কিন্তু গত (৫ সেপ্টেম্বর) শনিবার গ্রেফতারের পর ইসলামাবাদ, লাহোরসহ সব জায়গার পথঘাট অনেকটা স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে। কোনও হুলস্থূল দেখা যায়নি রাতেও।
এবার ইমরান যে অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তা হলো- রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। বরং সেসব অর্থ সরিয়েছেন তিনি। আদালত জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকাকালে ক্ষমতার অপ্যবহার করেছেন ইমরান। এই রায় আসন্ন নির্বাচনে দাঁড়াতে তাকে অযোগ্যতার দিকে নিয়ে যাবে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অবশ্য গ্রেফতারের আগে সমর্থকদের ঘরে চুপচাপ বসে না থেকে এই সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ডাক দেন ইমরান খান। কিন্তু এই ডাকের প্রতিফলন দেখা যায়নি রাজপথে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন? শাহবাজ শরিফের সরকারের মন্ত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলবেন, সমর্থকরা ইমরান খান বা তার দল পিটিআইকে আর সমর্থন করতে চায় না। পূর্বের সহিংসতায় দায়ী একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়াতে চায় না আর।
যদিও এটি পিটিআইয়ের চেয়ারম্যানের সমর্থকদের বার্তা নয়। এ বিষয়ে তাদের সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ক্ষমতার প্রথমদিকে সেনাবাহিনীকে ইমরান খানের বন্ধু হিসেবে দেখা হয়েছিল। এই কারণে তিনি রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট ক্ষমতাধর ছিলেন বলেও মনে করা হয়। কিন্তু গত এক বছর সেই সম্পর্ক এতটাই বাজে ভাবে ভেঙেছে যে শেষপর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত হতে হলো পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে। এর জন্য সেনাবাহিনীকে প্রকাশ্যে দায়ী করেন তিনি।
এখানেই থেমে থাকেননি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে নীরব না থেকে প্রতিদিনই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। ফলে গত মে মাসে দেশজুড়ে সহিংস আন্দোলনে ধরপাকড়ে দলের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনা অবকাঠামো ও যানবাহনে যারা পুড়িয়েছে তাদের সামরিক আইনে বিচারের ঘোষণা দেওয়া হয়। আতঙ্কে ডজনখানেক নেতা-কর্মী পিটিআই ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেন।
টেলিভিশন ও পত্রিকায় ইমরান খানের সংবাদ প্রচারেও বিধিনিষেধ রয়েছে। গত মাসে দেশটির মিডিয়ার মালিকরা সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার নাম প্রকাশ হচ্ছে না।
এদিকে সরকার বিবিসিকে জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হেনস্তা করবে না তারা। কিন্তু গত শনিবার লাহোরে ইমরান খানের বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া সমর্থকদের তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। মামলা দেওয়া হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, সেদিন অন্তত ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘আমি মনে করি, কঠোর দমন-পীড়ন অভিযান ইমরান খানের সমর্থকদের মাঝে চরম ভীতি ছড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রকৃত অর্থে মনে করি, আমরা গত ৯ মে যেভাবে দেখেছি, পিটিআইয়ের সমর্থকরা এখন সেভাবে নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলতে চান না। অন্যদিকে সামরিক বাহিনী ঠিকভাবেই খেলাটা খেলছে। ইমরানের সমর্থকরা বৃহত্তর ও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল, সেই জায়গায় সামরিক বাহিনী কৌশল ব্যবহার করেছে।’
অবশ্য এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি সরকার। ইমরান নিজে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও তার দল ঠিকই লড়াই করবে বলে জানিয়েছেন পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি।