ঢাকা নগরীর দক্ষিণখানে সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারুল (৩৫) নামে এক যুবকের টুকরো করা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার (২৫ মে) ভোরে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমানের সঙ্গে বিরোধের জেরেই স্থানীয় আজহারকে হত্যা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মে) বিকালে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম।
লে. কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম জানান, ইমাম রহমান এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আজহারের স্ত্রীও এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।
তিনি জানান, মাওলানা মো. আব্দুর রহমান সরদারবাড়ি জামে মসজিদে ৩৩ বছর ধরে ইমামতি করেছেন। পাশাপাশি তিনি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় করেন। নিহত আজহারের ছেলে আরিয়ান মসজিদে গিয়ে আরবী শিখতো। নিহত আজহারও তার কাছে কুরআন শিখতো। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ও যাতায়াত ছিল। গত ১৯ মে মাওলানা আব্দুর রহমানের সঙ্গে আজহারের কথা কাটাকাটি হয়। কথাকাটির এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আজহারের গলার ডানপাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আব্দুর রহমান। এতে আজহারের মৃত্যু হলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার লাশ টুকরো টুকরো করে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে আব্দুর রহমান। এরপর থেকে তিনি নিজের ঘরেই অবস্থান করছিলেন।
লে. কর্নেল মোত্তাকিম জানান, এই ঘটনায় সঙ্গে পরকিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা আমরা যাচাই বাছাই করছি। এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে ইমাম আব্দুর রহমান বলেছেন, আজহার আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে এবং বলেছে তার স্ত্রীর দিকে আমি (আব্দুর রহমান) কু-দৃষ্টি দিয়েছি। এই নিয়েই তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই রেগে গিয়ে এক পর্যায়ে ঘরে থাকা ধারলো অস্ত্র দিয়ে আজহারকে কোপ দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে ভোর পর্যন্ত একাই লাশ ছয় টুকরা করে নিচে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন আব্দুর রহমান। পরে মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য পাশে রাখা সিমেন্ট দিয়ে মুখ বন্ধ করে
তিনি আরও জানান, সরদার বাড়ী জামে মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ এবং সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার খবর পেয়ে তারা সেখানে যান। তখনই জানতে পারেন আজহার নামে এক ব্যক্তি গত ১৯ মে থেকে নিখোঁজ। এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ইমামকে ভোররাতে মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সকালে মসজিদের সেফটিক ট্যাংক থেকে গলিত অবস্থায় আজহারের লাশ উদ্ধার করা হয়
এরপরে রাতেই আসমাকেও গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব আরও জানায়, আজহারকে খুনের পর লাশ টুকরা করে সেপটিক ট্যাংকে ভরে রক্ত মুছে ইমাম আব্দুর রহমান মসজিদে ফজরের নামাজে ইমামতি করেছিলেন। ঘটনার পর না পালিয়ে মসজিদের যে কক্ষে থাকতেন, সে কক্ষ ছেড়ে পাশে মাদ্রাসার একটি কক্ষে থেকে যথারীতি ছয় দিন ধরে নামাজে ইমামতি করে আসছিলেন ইমাম আব্দুর রহমান। এরপরে ঘরের রক্ত মুছে নিজে গোসল করে ফজরের নামাজে যথারীতি ইমামতি করেন আব্দুর রহমান।
তবে ঘটনার একদিন পর জুমার নামাজ পড়াতে গিয়ে দুবার তার ভুল হয়েছিল এবং তাকে কিছুটা অস্বাভাবিক লাগছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।