সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) যন্ত্র কিনতে গত বছরের জুনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্রিনট্রেডকে কাজ দেওয়া হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে সিরাজগঞ্জের হিসাবরক্ষণ অফিসের চেকের মাধ্যমে অগ্রিম পরিশোধ করা হয় ১৬ কোটি টাকাও। এর পর ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও এমআরআই যন্ত্র আর আসেনি, উল্টো ১৬ কোটি টাকা নিয়ে এখন লাপাত্তা গ্রিনট্রেডের মালিক মাহফুজ হুদা সৈকত।
অভিযোগ রয়েছে, এমআরআই যন্ত্র কেনায় আগাম বিল হাতিয়ে নিতে ঠিকাদার মাহফুজকে সহযোগিতা করেছেন প্রকল্প পরিচালক ডা. কৃষ্ণ কুমার পাল, ১৪ মাস ধরে মাহফুজ কোথায় আছেন, তারও খোঁজ দিতে পারছে না কেউ। হাসপাতালে জমা দেওয়া কাগজপত্রে গ্রিনট্রেডের ঠিকানা দেওয়া আছে ঢাকার ২১/৬, খিলজি রোড, মোহাম্মদপুরে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ) কার্যালয়, এমনকি দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে দফায় দফায় তদন্ত হলেও কোনোটির মুখোমুখি হননি ঠিকাদার মাহফুজ। ঠিকানা অনুযায়ী কাউকে সেখানে পায়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে সরকারি টাকা লোপাটের কোনো তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে আবার অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
শুধু এমআরআই যন্ত্রই নয়,স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসাব নিয়ন্ত্রক শাখার কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে হাসপাতালের সরকারি বরাদ্দের আরও প্রায় ২৫ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায়ও মাহফুজ জড়িত। গত বছরের জুনে ঢাকার এম জাহান ট্রেডার্সের মালিক মহসিন আলী ও গ্রিনট্রেডের মাহফুজ ভুয়া বিল-ভাউচার এবং কোড পরিবর্তন করে সরকারের সমন্বিত বাজেট ও হিসাব সংরক্ষণ ব্যবস্থা বা আইবাস থেকে এই টাকা হাতিয়ে নেয়। ঘটনার পর মহসিন-মাহফুজ লাপাত্তা হলেও হিসাব নিয়ন্ত্রক শাখার কর্মকর্তা আফজাল উল বাশার, তৈয়বা আকতার (নীরিক্ষক), সিফাত আরা সাফিনা, অধীক্ষক সুরাইয়া আকতার ও মোহাম্মদ মহসিন মিজি সাময়িক বরখাস্ত হন’। ঠিকাদারের পক্ষে চেক গ্রহণকারী ঢাকার তেজঁগাও স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চমান সহকারী আনিসুর রহমানও দুদকের জালে ধরা পড়েন।
দুদক সমন্বিত কার্যালয়, ঢাকা-১-এর উপপরিচালক আকতার হামিদ ভূঁইয়া জানান, ঘটনার হোতা মহসিন আলী ও মাহফুজ হুদা সৈকত লাপাত্তা হলেও তাদের একান্ত সহকারী আনিছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মহসিন ও মাহফুজ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। মামলাটির তদন্ত চলমান।
সিরাজগঞ্জের একই হাসপাতালের প্রায় ১২৫ কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনাকাটায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর পৃথক আরেকটি মামলা করে দুদক। প্রকল্প পরিচালক ডা. কৃষ্ণ কুমার পাল ও বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী জাহের উদ্দিন সরকারের নামে দুদকের পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ে মামলাটি করেন সংস্থার সদরদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহজাহান মিরাজ। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন অপর সহকারী পরিচালক কামিয়াব আফতাব-উন-নবী’।
এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. কৃষ্ণ কুমার পাল বলেন, ‘আইবাস থেকে ২৫ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় দুদক মামলা করেছে। পৌনে তিন বছর আগে আরেকটি পৃথক ঘটনায়ও দুদক তদন্ত করছে। এমআরআই মেশিন কেনায় আগাম বিল পরিশোধ করা হলেও নিরাপত্তা জামানত হিসেবে ১৪ কোটি টাকার পেমেন্ট অর্ডার রাখা হয়েছে’। কিন্তু বর্তমান জটিলতায় ব্যাংক থেকে সেটি ক্যাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এটি জানে। আমরাও এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাও নিয়েছি। টাকা প্রাপ্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
হাসপাতাল পরিচালক ডা. সায়ফুল ফেরদৌস ও খায়রুল আতাতুর্ক জানান, এমআরআই যন্ত্র এখনও পাওয়া যায়নি। দুদক বিষয়টি তদন্ত করছে। দুদকের প্রধান কাযালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান-২ শাখার উপপরিচালক আনোয়ারুল হক প্রকল্প পরিচালক ডা. কৃষ্ণ কুমারকে পরপর তিনটি চিঠি দিয়েছেন। তাকে ঢাকায় ডেকে আগামী ৯ জুলাইর মধ্যে এমআরআই যন্ত্রের ক্রয়-সংক্রান্ত সব তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। যন্ত্রটি সিরাজগঞ্জ না আসায় উন্নত চিকিৎসা প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছেন দূর-দূরান্তের সেবাপ্রত্যাশীরা।
সিরাজগঞ্জ জেলা হিসাব শাখার অডিটর নুর-এ-আলমের দাবি, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমআরআই যন্ত্র ক্রয়ে পিডি ডা. কৃষ্ণ কুমারের স্বাক্ষরসহ সরবরাহকৃত ডকুমেন্ট দেখে বিধিবর্হিভূতভাবে ভ্যাট ও উৎসে করসহ প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকার বিল ছাড় করা হয়েছিল।
✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!