অক্ষয়কুমার দত্ত

হাবিব রেজা
হাবিব রেজা
5 মিনিটে পড়ুন

অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ) ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণ যুগের অন্যতম কবি, ধর্মচিন্তাবিদ।

অক্ষয়কুমার দত্তের জীবনী এবং কর্ম

১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুলাইতে বর্ধমান জেলার চুপী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি পিতাকে হারান। তারপর তিনি দারিদ্র-দশার ভিতর প্রতিপালিত হয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘকালব্যাপী নানাবিধ অসুখে ভুগেছেন। ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে বছর-দুই পড়ার পরেই পিতৃবিয়োগের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর তিনি ছেড়ে দেন অর্থোপার্জনে উদ্যোগী হন। তিনি নিজের চেষ্টায় সংস্কৃত, ফারসী, জার্মান প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষায় গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি অনঙ্গমোহন নামক কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। একটু বড় হয়ে, তিনি ঈশ্বর গুপ্ত সম্পাদিত সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার জন্য ইংরেজী সংবাদপত্র থেকে প্রবন্ধাবলী বঙ্গানুবাদ শুরু করেন। এই ভাবে গদ্য রচনার সূত্রপাত।
১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের প্রস্তাবে এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমর্থনে তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্য হন এবং কিছুদিন এই সভার সহকারী-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।

১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুন তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা স্থাপন করলে, তিনি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী সভা থেকে তাঁর রচিত বাংলা ‌’ভূগোল‌‌’ নামক একটি বালপাঠ্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে টাকির প্রসন্নকুমার ঘোষের সহযোগিতায় বিদ্যাদর্শন নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। তবে পত্রিকাটির ৬’টি সংখ্যা প্রকাশের বন্ধ হয়ে যায়।

- বিজ্ঞাপন -

কলকাতা ব্রাহ্মসমাজের ও তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র চপত্রিকার সম্পাদক নির্বাচনের জন্য, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করেন। এই পরীক্ষায় তাঁর একটি প্রবন্ধ সর্বোৎকৃষ্ট মান পায়। এই সূত্রে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে মাসিক ৩০ টাকা বেতনে উক্ত পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেন।

১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগস্ট, তাঁর সম্পাদনায় ব্রাহ্মসমাজ ও তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপাত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে। রচনাসম্ভারে ও পরিচালনার গুণে পত্রিকাটি শ্রেষ্ঠ বাংলা সাময়িকপত্রে পরিণত হয়। পত্রিকাটিতে তত্ত্ববিদ্যা, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, বিজ্ঞান, ভূগোল প্রভৃতি নানা-বিষয়ক প্রবন্ধ থাকত। সচিত্র প্রবন্ধও থাকত। স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার ও হিন্দু-বিধবাদের সমর্থনে এবং বাল্যবিবাহ ও বিবিধ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিবহুল বলিষ্ঠ লেখাও এতে প্রকাশিত হত। নীলকর সাহেব ও জমিদারদের প্রজাপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি এই পত্রিকায় নির্ভীক ভাবে লেখনী চালনা করেন। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, প্রায় ১২ বছর তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর-এ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অপর ২১ জন বন্ধুর সঙ্গে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষাগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য এই দলই প্রথম দীক্ষিত ব্রাহ্ম। বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদে বিশ্বাসী অক্ষয়কুমার বেদের অভ্রান্ততা স্বীকার করতেন না। এ সম্পর্কে তিনি আন্দোলন আরম্ভ করেন। তার ফলে দেবেন্দ্রনাথ ও ব্রাহ্মসমাজ শাস্ত্রের অভ্রান্ততায় বিশ্বাস বর্জন করেন। ব্রাহ্মসমাজে সংস্কৃত ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষায় ঈশ্বরোপাসনার তিনি অন্যতম প্রবর্তক। পরে তিনি প্রার্থনাদির প্রয়োজন স্বীকার করতেন না এবং শেষ বয়সে অনেকটা অজ্ঞাবাদী হয়ে পড়েন।

অক্ষয়কুমার দত্ত
অক্ষয়কুমার দত্ত 35

১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর কাশীপুরের কিশোরীচাঁদ মিত্রের ভবনে, সমাজের কুসংস্কার-উচ্ছেদ ও সমাজের কল্যাণের জন্য একটি সভা ডাকা হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন- কিশোরীচাঁদ মিত্র, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রশেখর দেব, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, রাধানাথ শিকদার। এঁদের সম্মতিতে গঠিত হয়েছিল ‘সমাকোন্নতিবিধায়িনী সুহৃৎসমিতি‌’। এই সমিতির সম্পাদক হন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সম্পাদক নির্বাচিত হন অক্ষয়কুমার দত্ত।

১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জুলাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলিকাতায় নর্ম্যাল স্কুল স্থাপন করলে, অক্ষয়কুমার ১৫০ টাকা বেতনে প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু মাথার প্রদাহজনীত রোগের প্রাবল্যে তিন বছর পরে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’ থেকে তাঁকে মাসিক ২৫ টাকা বৃত্তিদানের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু অল্পকালমধ্যেই পুস্তকাবলীর আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বৃত্তিগ্রহণ বন্ধ করেন।

- বিজ্ঞাপন -

ভারতবর্ষীয় উপাসক-সম্প্রদায়; নামক পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণা-গ্রন্থটি তার শ্রেষ্ঠকীর্তি (প্রথম ভাগ ১৮৭০, দ্বিতীয় ভাগ ১৮৮৩)। গ্রন্থখানির সুদীর্ঘ উপক্রমণিকায় তিনি আর্যভাষা ও সাহিত্যের প্রধান শাখাত্রয় (ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয় এবং বৈদিক ও সংস্কৃত) সম্বন্ধে গভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা করেন।

১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মে-তে মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য তাঁর পৌত্র ছিলেন প্রখ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।

তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ

  • ভূগোল (১৮৪১)
  • শ্রীযুক্ত ডেবিড হেয়ার সাহেবের নাম স্মরানার্থ তৃতীয় সাম্বৎসরিক সভার বক্তৃতা (১৮৪৫)
  • বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার (১ম ভাগ ১৮৫১, ২য় ভাগ ১৮৫৩)
  • বাষ্পীয় রথারোহীদের প্রতি উপদেশ (১৮৫৫)
  • ধর্মোন্নতি সংশোধন বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫)
  • ধর্মনীতি (১৮৫৬)
  • চারুপাঠ (১ম ভাগ ১৮৫৩, ২য় ভাগ ১৮৫৪, ৩য় ভাগ ১৮৫৯)
  • পদার্থবিদ্যা (১৮৫৬)
  • ভারতবর্ষীয় উপাসক-সম্প্রদায় (প্রথম ভাগ ১৮৭০, দ্বিতীয় ভাগ ১৮৮৩)
  • প্রাচীন হিন্দুদিগের সমুদ্রাযাত্রা (মৃত্যুর পরে প্রকাশিত, ১৯০১)

তথ্যসূত্র:

  • বাঙালি চরিতাভিধান। প্রথম খণ্ড। সাহিত্য সংসদ। জানুয়ারি ২০০২
  • বাংলা বিশ্বকোষ। প্রথম খণ্ড। নওরোজ কিতাবিস্তান। ডিসেম্বর, ১৯৭২।
  • ভারতকোষ। প্রথম খণ্ড

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!