অং সান ছিলেন মায়ানমারের (প্রাক্তন নাম বার্মা) স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা।
১৯১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ইনি কেন্দ্রীয় বার্মার মাগওয়ে জেলার নাতমাউক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন আইনজীবী উ ফা এবং মায়ের নাম দাও। অং সান নাতমাউকের বৌদ্ধ মন্দিরের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন এবং ইয়েনাঙ্গিয়াউং হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন।
অং সান ১৯৩৩ সালে ইয়াংগুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সক্রিয় রাজনীতি করার সূত্রে ইনি একজন ছাত্র নেতায় পরিণত হন। তিনি ইয়াংগুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সভায় নির্বাচিত হন। এই সময় এদের একটি পত্রিকা ‘ওয়ে-র ‘ – এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৩৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সানের সম্পাদিত পত্রিকায় বেনামে একটি নিবন্ধে– বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ কর্মচারীর সমালোচনা করা হয়। ওই লেখাটির লেখকের নাম জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু অং সান ওই লেখকের নাম প্রকাশে অসম্মতি জানালে– বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বহিস্কারের হুমকি দেয়া হয়। এই সূত্রে ছাত্ররা ধর্মঘট আহ্বান করলে এই বহিস্কারের হুমকি উঠিয়ে নেওয়া হয়।
১৯৩৮ সালে অং সান সর্ব-বার্মা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছরে সরকার তাঁকে Rangoon University Act Amendment Committee-র ছাত্র প্রতিনিধির পদ দেয়।
১৯৩৮ সালে অং সান ইংরেজি সাহিত্য, আধুনিক ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এবং পরে আইন স্কুলে ভর্তি হন। এই বৎসরের অক্টোবরে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তিনি ব্রিটিশ ও উপনিবেশবাদের আন্দোলনকে- জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন।
১৯৩৯ সালে ইনি ‘কমুনিষ্ট পার্টি বার্মা’ র সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মায়ানমারে জাপানি বিমান হামলা চলাকালীন সময়ে অং সান মায়ানমারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন।
১৯৪৫ সালে তিনি মায়ানমারের জাতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং মিত্রবাহিনীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মায়ানমারের আইনসভার নির্বাচনে Anti-Fascist People’s Freedom League (AFPL) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই সময় ইনি মায়ানমারের অস্থায়ী সরকারের প্রধান ছিলেন। এই দলের মাধ্যমেই মায়ানমারের পূর্ণ স্বাধীনতার ডাক দেন। ১৯৪৭ সালের ১৯শে জুলাই মায়ানমারের স্বাধীনতা-চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র ছয় মাস আগে আততায়ীর গুলিতে অং সান ও তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীসহ নিহত হন।
উল্লেখ্য অং সান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়িনী অং সান সু কি-র পিতা।