অঙ্গীকার
চেতনার অন্তর্লোকে ঘুমায় পদ্মকলি
বোধের উন্মেষে বাঙ্ময় ধ্বনি
অক্ষরের হীরকদ্যুতিতে সাজানো চন্দ্রহার
সে আমার হৃদয়ের ভাষা
আমার বাংলা ভাষা।
অনেক যুদ্ধ, অনেক শহীদের আত্মত্যাগ
ভাষা শরীরে রক্ত আঁচড়ে লেখা আছে
বরাকে জ্বলেছে আগুন, জ্বলেছে শাহবাগে
জীবনের সুরক্ষায়, অস্তিত্বের আহবানে
প্রাণে প্রাণে এক হয়ে—
মানুষ নিয়েছে অঙ্গীকার
বাংলা আমার প্রাণ আমার যত্নের ধন
স্বর্ণ নির্মোকে রক্ষা করবো
আমার ভাষা মায়ের সম্মান।
চিরন্তন
কোজাগরী পূর্ণিমা
আকাশে আজ অনন্ত জ্যোৎস্না
তোমার হাতে রেখেছি হাত।
আজ সকালের দোতারায় ছিল টুংটাং
প্রেমের খুনখারাপি বন্দিশ
শিশির ভেজা ঘাসের বুকে রিনঝিন
সোনালি ওড়নার উঁকিঝুঁকি।
তোমার হাতের উল্কির মাঝে
ঘুমায় আমার ঝকমকে নাকছবি
চুমুগুলো ফুটতে চায় রোমশ বুকে
দেওয়া-নেওয়ার হিসেব ওলট পালট।
আজ এই জ্যোৎস্না মাখানো রাতে
আমাদের অতীত বর্তমান কিংবা ভবিষ্যৎ
সব কিছুই ধুয়ে মুছে যাক
শুধু ফুটে উঠুক বিশ্বাস চিরন্তন।
শবযাত্রা
আমি হাঁটছি
আমার দু’পাশে অসংখ্য শববাহী গাড়ি
আমার সঙ্গে হাঁটছে
আমার গতকাল, আজ
কিংবা আগামিকালের সব ছায়াশরীর।
আমার অতীত আর বর্তমান আমাকে গড়ে তোলে
আমি ঝরা ফুলের সুগন্ধে বিষন্ন হবো না আজ
আমার ছায়াশরীর
আজও দেখেছে একটি উজ্জ্বল প্রদীপের স্বপ্ন।
প্রেম একটি উড়ে আসা প্রজাপতির মতো
আমাকে ছুঁয়ে গেছে বারবার
সেই সব ছোট্ট ছোট্ট অবসরে জেগেছে শরীর
প্রেমিকের চুমুগুলো যেন জ্যোৎস্নার বালিশ।
রাত শেষ হয়
আমার ছায়াশরীর একা হাঁটে
ভাদ্র দুপুরের খর রোদে
প্রেমিকের নাটুকে ছলা-কলা
শুকনো আঁশের মতো ঝরে যায়।
আমি আর আমার ছায়াশরীর
তীব্র ক্লান্তিতে একা হই
কারণ শবযাত্রার সময় এসেছে।
চরৈবেতি
আমরা রোজ হাঁটি
হাঁটতে হাঁটতে দূরত্ব মাপি
এলোমেলো ভাবনার বাতাস ভেসে আসে
রাত বারোটায় চাঁদের মুখোমুখি হতে ভয় হয়
জন্ম-জন্মান্তরের অববাহিকায় অশরীরী ইচ্ছেরা
জারজ দুঃখের মতো অতৃপ্তিতে ভোগে
হাঁটার বিরাম নেই
পেরিয়েছি সাতটি মরুভূমি
হয়তো পেরোতে হবে আরো
চরৈবেতি মন্ত্রের উদযাপনে।
প্রতীক্ষা
মনের আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাজানো স্বপ্ন
জীবনের উত্তর পর্বে যখন চাঁদ ওঠে
তখন স্বপ্ন বাস্তবের দরজায় কড়া নাড়ে।
ঝাড়পোঁছ চলে—
জীবনকে ধুলো ঝেড়ে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হয়।
স্বপ্নের মমি জেগে ওঠে রাতে
নীরবতা ভেঙেচুরে ঝড় আসে
শরতের সোনালি রোদে একা পাখি
অনন্তকাল বসে থাকে সুরের প্রতীক্ষায়।
তিতির
ড্রাইভিং সিটে বসে আছি
মসৃণ রাস্তা এক্সিলেটরে চাপ বাড়ে
ব্যাক সীটে তুমি
আমার প্রতি কোষে ছড়িয়ে যায়
শব যাত্রার বিষন্ন বিষাদ
ছটপটে একটি ছোট্ট তিতির
একদিন বাসা বেঁধেছিল
তোমার আমার স্বপ্ন সাজানো মেঘ কুটিরে
শুকতারার আলোয় বুনেছিল আকাশি ওড়না
তিতিরের ডানায় ভালবাসার মুক্তোবিন্দু
লুকিং গ্লাসে দুটি চোখ
ঘৃণার আগুনে জ্বলে
স্পিড লিমিট এখন প্রাগৈতিহাসিক বিবর্তনে
তিতিরের ডানায় কয়েক ফোঁটা রক্ত
একটি বুলেটের ভবিষ্যৎ কল্পনা।