ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভের পরও কমানো হলো আদালতের ক্ষমতা
ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে সে দেশে সংসদ সদস্যরা নতুন এটি বিতর্কিত আইন পাশ হয়েছে। এই আইনে ‘অযৌক্তিক’ মনে করে কোন সরকারি পদক্ষেপকে বাতিল করার সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাটি কেড়ে নেয়া হয়েছে। আইন সংশোধনের এই পদক্ষেপ নিয়ে ইসরায়েলে তিক্ত বিবাদ চলছে।
এই আইন সংস্কারকে ঘিরে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধী দলগুলো সতর্ক করেছে যে এসব পদক্ষেপ সে দেশের গণতন্ত্রকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
অন্যদিকে সরকার যুক্তি দিচ্ছে, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থেই এই সংশোধনী প্রয়োজন, কারণ সাম্প্রতিক দশকগুলিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর আদালত ক্রমবর্ধমান হারে হস্তক্ষেপ করছে।
এনিয়ে সোমবার চূড়ান্ত ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে, জেরুসালেমে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট কেনেসেটের বাইরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
‘কখনই আত্মসমর্পণ করবো না’
সংসদের এই ভোটটি নিয়ে গত ক’মাস ধরেই ইসরায়েল অশান্ত হয়ে আছে। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট সোমবার রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন, দেশটি এখন এক “জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।”
সোমবার সকালে কেনেসেটের বাইরে ফুটপাত অবরোধকারীরা ড্রাম, হুইসেল এবং এয়ার হর্ন বাজিয়ে বিক্ষোভ দেখায় এবং পুলিশ জলকামান দিয়ে তাদের রাস্তা থেকে হটিয়ে দেয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবর দিচ্ছে, ঐ ঘটনায় একজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন এবং ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাস্তার ওপর শুয়ে থাকা একজন বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলেন যে তিনি ‘স্বৈরাচার’-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কতদিন এ অবস্থায় থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কখনোই আত্মসমর্পণ করবো না।“
কী নিয়ে শুরু হলো সঙ্কট?
আরেকজন বিক্ষোভকারী রেউত ইফাত উজিয়েল বলেন, তিনি তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। “নেতানিয়াহু দেশটিকে হাইজ্যাক করেছেন এবং আমি উদ্বিগ্ন যে এটি [ইসরায়েল] একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে,” তিনি বলেন।
নতুন আইনটি যাতে পাশ না হয় সেজন্য হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গত সপ্তাহের শেষদিকে তেল আবিব থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত প্রায় ৪৫ মাইল (৭০ কিলোমিটার) পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার তার হার্ট অপারেশনের পরপরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে সংসদে এসে হাজির হন।
এই আইন সংশোধনের প্রস্তাবে পুরো ইসরায়েল জুড়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুতর অভ্যন্তরীণ সঙ্কট শুরু হয়েছে।
‘এই আইন গণতন্ত্রের ওপর আঘাত করবে’ – এই বলে চলতি বছরের শুরু থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রতি সপ্তাহে রাস্তায় নেমেছেন।
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর পাইলটসহ হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীতে অংশ না নেয়ার হুমকি দিয়েছেন, যা সঙ্কটকে আরও গভীর করে তুলেছে।
বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, এধরনের অভূতপূর্ব ভিন্নমত ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা সার্ভিসের সাবেক প্রধান, দেশের প্রধান বিচারপতি এবং বিশিষ্ট আইনজীবী এবং ব্যবসায়ী নেতারাও সরকারের এই আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন, এই “বিভাজন সৃষ্টিকারী” আইনটি যেন স্থগিত করা হয়।