রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে ইউক্রেন
দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শুরু করা পাল্টা আক্রমণে এখন পর্যন্ত বিশেষ কোনও সফলতা অর্জন করতে পারেনি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। ১৭ মাসে গড়ানো যুদ্ধ ইতোমধ্যে একটি প্রবণতা হাজির করছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। রুশ সেনাবাহিনী স্পষ্টভাবে কামান দিয়ে আঘাত করার মতো কোনও লক্ষ্যবস্তু পাচ্ছে না।
ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা গুঁড়িয়ে এগিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী নতুন এবং স্থায়ী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে যা ধীর অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে। বাহিনীটির পাল্টা আক্রমণে যেসব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা সম্পর্কেও প্রতিবেদনটিতে আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ইউক্রেন নিজেদের খুব ভালো মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আক্রমণ অভিযানে তাদের সাফল্য বিপরীত। তথাকথিত জিরো-রেখার দিকে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী গত কয়েক সপ্তাহে খুব কম অগ্রগতি অর্জন করেছে।
ইউক্রেনের পদাতিক বাহিনী পরিখার ওপর হামলায় অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লাখো সেনা হতাহত হয়েছে। এসব শূন্যস্থান অনেক সময় কম প্রশিক্ষিত ও পুরনো সেনাদের দ্বারা পূরণ করা হচ্ছে।
আর যখন রুশ সেনারা কোনও অবস্থান ছেড়ে চলে যাচ্ছে তখন ইউক্রেনীয়রা সেখানে কামানের গোলার হামলার মুখে পড়ছে। ফলে সেখানে বেশি সময় তারা অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না।
ইউক্রেনীয় সেনারা বলছেন, গোলাবারুদ ও অস্ত্রের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে মিশ্র গোলাবারুদ পাঠানো হচ্ছে। এই কারণে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে ইউক্রেনীয় কামান ইউনিটকে বেশি গোলাবারুদ ব্যবহার করতে হচ্ছে।
কারণ বিভিন্ন গোলার নির্ভুলভাবে আঘাতের সক্ষমতা ভিন্ন। এছাড়া বিদেশ থেকে পাঠানো কিছু গোলাবারুদ ত্রুটিপূর্ণ, এগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে ইউক্রেনীয় সেনারাই আহত হচ্ছে।
ইউক্রেনের এক ব্যাটালিয়ন কমান্ডার অ্যালেক্স বলেছেন, এটি এখন অনেক বড় সমস্যা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মের মাসগুলোতে রণক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য ক্যামোফ্লেজ ও সবুজ গাছপালা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী এক্ষেত্রে সব সময় সুবিধা পায়। অদেখা পরিখা বা গোপন ইলেক্ট্রনিক সমরাস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালাতে পারে তারা।
মে মাসে রাশিয়ার দখল করা পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহরে ইউক্রেনীয়রা কিছুটা অগ্রসর হতে পারছে। কারণ এখানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সময় খুব বেশি পায়নি রুশ বাহিনী। কিন্তু অপর রণক্ষেত্রেগুলোতে সফলভাবে রুশ পরিখায় আক্রমণ চালাতে সক্ষম সেনা খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে ইউক্রেন।
দীর্ঘ লড়াইয়ে সেনাদের একাংশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের আক্রমণে পরিখান খনন হয়ে পড়েছে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও প্রয়োজনীয় কাজ। স্নাইপারের মতো বিশেষ দক্ষতার প্রশিক্ষণ এখন প্রায় বন্ধ রয়েছে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর এক নতুন সেনা বলেছেন, আমরা সক্রিয় লড়াইয়ে ছিলাম না। কিন্তু আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
কয়েক ডজন সেনা হতাহত হওয়া একটি ইউক্রেনীয় প্লাটুন কমান্ডার বলেন, কীভাবে আশা করা যায় ৪০ বছরের একজন ভালো পদাতিক সেনা বা মেশিন গানার হবেন? তরুণদের শুধু শারীরিক শক্তি ভালো। অবশ্য তারা নির্দেশ পালনে কোনও প্রশ্ন করে না।
ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধেও পিছিয়ে পড়ছে ইউক্রেন। রাশিয়া ইরানের যে ড্রোন ব্যবহার করছে সেগুলো তারা জ্যাম করতে পারছে না। এক জুনিয়র সার্জেন্ট বলেছেন, আমরা জানি না তারা কীভাবে যোগাযোগ করে। এটি আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে পড়েছে।