ক্রিমিয়া সেতু কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রাশিয়াপন্থি ক্রিমিয়া প্রশাসনের প্রধান সের্গেই আকসিয়োনভ বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতির কারণে সোমবার ভোর থেকে দুই ভূখণ্ডকে সংযুক্তকারী একমাত্র সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়।
আরবিসি-ইউক্রেন বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সেতুতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রুশ সামরিক ব্লগাররা দুটি হামলার কথা তুলে ধরেছেন। রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের বেলগোরোদ অঞ্চলের গভর্নর জানিয়েছেন, সোমবার ক্রিমিয়া সেতুতে দুর্ঘটনায় গাড়িতে থাকা এক দম্পতি নিহত এবং তাদের মেয়ে আহত হয়েছেন। রাশিয়া হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করছে। এই বিষয়ে ইউক্রেনের আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে বিবিসি জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী চালিয়েছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন কিয়েভের কর্মকর্তারা।
এর আগে গত বছর অক্টোবরে শক্তিশালী বিস্ফোরণে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রুশ কর্মকর্তারা তখন বলেছিলেন, সেতু অতিক্রমের সময় একটি ট্রাক বিস্ফোরিত হলে বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে তিন ব্যক্তি নিহত হন।
অক্টোবরের হামলাকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা হামলার নেপথ্যে ছিল। এই হামলার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ওই হামলার কয়েক মাস পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরোক্ষভাবে দাবি করেছিলেন এতে তার দেশ জড়িত ছিল। ২০২২ সালে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সাফল্যের তালিকায় সেতুতে হামলাকে রেখেছিলেন।
রাশিয়া ও ক্রিমিয়ার সংযোগ
কার্চ প্রণালীতে নির্মিত এই ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি রাশিয়া ও ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে একমাত্র সরাসরি পরিবহন সংযোগ। ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এই সেতুটি। ব্যাপক আয়োজনে ২০১৮ সালে তিনি এই সেতু উদ্বোধন করেছিলেন। ওই সময় নিজেই গাড়ি চালিয়ে সেতু পার হন তিনি।
এতে পৃথক সড়কপথ ও রেলপথ রয়েছে। সেতুর নিচ দিয়ে কৃষ্ণ সাগর ও ছোট আজভ সাগরের জাহাজ চলাচল করে।
সেতুটি তৈরি করতে ৩৬০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রেসিডেন্টে পুতিনের সাবেক জুডো পার্টনার ও ঘনিষ্ঠ মিত্র আরকাদি রটেনবার্গের কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
ক্রিমিয়ায় জ্বালানি, খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহের জন্য এই সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। উপদ্বীপের সেভাস্তোপোলে রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহর মোতায়েন রয়েছে।
ইউক্রেনে আক্রমণকারী রুশ সেনাদের রসদ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ রুট এটি। ক্রিমিয়া থেকে দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া সেনাদের পাঠানো হয়। এই দুটি অঞ্চল রাশিয়ার দখলে রয়েছে।
কিছু দিনের জন্যও সেতু দিয়ে পরিবহন যদি বন্ধ হয় তাহলে রাশিয়ার জন্য রসদ চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। চলমান পাল্টা আক্রমণের শুরুতে ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো এই রসদ সরবরাহে ব্যাঘাত তৈরি করা।
রুশ দখলের ঘৃণ্য প্রতীক
ইউক্রেনীয়দের জন্য ক্রিমিয়া সেতু রুশ দখলের ঘৃণ্য প্রতীক। গত অক্টোবরের বিস্ফোরণের খবরকে ইউক্রেনজুড়ে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে স্বাগত জানানো হয়েছিল।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি