পাল্টা আক্রমণের শুরুতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর কৌশল পাল্টাচ্ছে ইউক্রেন
পাল্টা আক্রমণের শুরুতে ইউক্রেন পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অস্ত্র ও সরঞ্জামের ২০ শতাংশ হারিয়েছে। অভিযানের গতি হ্রাস এবং কমান্ডাররা কৌশল পরিবর্তন করায় ক্ষয়ক্ষতি হার কমেছে। মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের মতে, আক্রমণ শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহে রণক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হয়েছে।
এর মধ্যে পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ আর্মর্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও ট্যাংক রয়েছে। রাশিয়াকে হারাতে এগুলোর ওপর ভরসা করছিল কিয়েভ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, পরের সপ্তাহগুলোতে এই ক্ষয়ক্ষতি দশ শতাংশে নেমে আসে। ইউক্রেন বলছে, আসন্ন বড় আক্রমণের জন্য তারা সেনা ও সরঞ্জাম বাঁচিয়ে রাখছে।
রণক্ষেত্রে অস্ত্র ও সরঞ্জাম হারানো কমে আসে ইউক্রেন নিজেদের কৌশল পরিবর্তনের কারণে। এখন তারা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ওপর কামান ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। অথচ শুরুর দিকে শত্রুর মাইনক্ষেত্র ও গুলির মুখে হামলা করতে সেনাদের পাঠিয়েছিল।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, এই সুসংবাদের বাস্তবের ভয়াবহ চিত্রকে কিছুটা অস্পষ্ট করে দিচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি কমেছে কারণ পাল্টা আক্রমণও গতি হারিয়েছে। এমনকি অনেক স্থানে পাল্টা আক্রমণ স্থগিত করা হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখা অতিক্রম করতে হিমশিম খাচ্ছে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরও মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এগোতে পেরেছে তারা। অথচ তাদের লক্ষ্য ৬০ মাইল অতিক্রম করে আজভ সাগর তীর পর্যন্ত পৌঁছে রুশ সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করা।
বেশ কয়েক মাস ধরে নেওয়া রাশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাল্টা আক্রমণের শুরুতে ইউক্রেনের এই ক্ষয়ক্ষতিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও স্বীকার করেছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে কয়েকটি স্থানে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আক্রমণ স্থগিত করা হয়েছে। তবে তিনি সরঞ্জাম ও গোলাবারুদের ঘাটতিকে দায়ী করেছেন এবং পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহের গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযানে বিরতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, ইউক্রেনীয় আবার অগ্রসর হতে শুরু করেছে, তবে অনেক বেশি পরিকল্পিতভাবে। মাইনক্ষেত্রে তারা সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় রাখছে। মার্কিন ক্লাস্টার বোমা হাতে পাওয়ার পর তাদের আক্রমণ গতি পেতে পারে।
বুধবার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছিলেন, এটি খুব দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে না। কিন্তু সময়সীমা থেকে বিপর্যয়কর মাত্রায় পিছিয়েও নেই। রাশিয়ার পুঁতে রাখা মাইনক্ষেত্র অতিক্রম করতে অন্যরা যা করতো ইউক্রেনও সেই কাজ করছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, পাল্টা আক্রমণে প্রথম ১৫ মাইল প্রতিরক্ষা রেখা অতিক্রম করা হবে সবচেয়ে কঠিন। কারণ এমন ঘটনায় সাধারণত আক্রমণকারী বাহিনীর তিনগুণ অস্ত্র, সেনা ও সরঞ্জাম প্রয়োজন প্রতিরক্ষাকারী বাহিনীর চেয়ে।
পশ্চিমা এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ছাড়া ইউক্রেনকে লড়াই করতে হচ্ছে উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল ভ্যালেরি ঝালুঝনি।
অবশ্য সামরিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, পাল্টা আক্রমণ নিয়ে সিদ্ধান্ত টেনে ফেলার মতো সময় এখনও আসেনি। ন্যাটোর সাবকে সহকারী মহাসচিটব ক্যামিল গ্রান্দ বলেছেন, এর অর্থ হয় তা ব্যর্থ হচ্ছে। পশ্চিমা যুদ্ধবিমান আকাশ যুদ্ধে যে শ্রেষ্ঠত্ব ও সুরক্ষা দিতে পারত, তা না থাকায় ক্ষয়ক্ষতি মাত্রা বেশি হতে পারে।
ইউক্রেনের হারানো আর্মর্ড ভেহিক্যাল ও ট্যাংকের নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করছে না ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা অস্ত্র ও সরঞ্জাম হারানোর হারের বিষয়ে একমত হয়েছেন।