নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের মালামাল ও বেশ কয়েকটি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে বিক্রি করার চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে।
আলোচিত ঘটনাটি ঘটে উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর জিতেন্দ্র নাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
সরকারি নিয়ম নীতির কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রায় দুই মাস ধরে চলছে এসব তাণ্ডবলীলা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা কেউ কোন দায় নিচ্ছেন না।
শুক্রবার ২১ মে বিকেলে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়।
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিদ্যালয়ে বসে তাদের নিজ উদ্যোগে পাঁচটি পুরাতন শ্রেণী কক্ষের বিভিন্ন মালামাল ও বিভিন্ন প্রজাতির ১৫ টি গাছ কেটে বিক্রি করে দেন।
এসময় উপস্থিত একই গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র শামসুল হক জানান, তিনি ৩২শ টাকা হাজার হিসেবে ৫ হাজার ইট ক্রয় করেন। তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিকুল ইসলাম পলাশ, সোহেল রানা, শিখা রানী স্বল্প দামে পুরাতন ইট ক্রয় করে নিয়ে চলে যান।
এ সময় ভুক্তভোগীরা বলেন, যদি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মালামাল গুলোর নিলাম হত তাহলে সেই নিলামে বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরা অংশ নিতে পারতেন কিনা? সেটি এখন প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। যেহেতু মালামাল গুলো শিক্ষকরাও কিনেছেন। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার বলে তারা মনে করেন।
অন্য উপস্থিত গাছ ব্যবসায়ী সফাপুর গ্রামের মৃত ককেন উদ্দিনের পুত্র আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিনি অত্র বিদ্যালয়ের কাঁঠাল, ইউকালেক্টর, মেহগনি ও জলপাই এর গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৫টি গাছ ক্রয় করেন ১০হাজার ৫০০ টাকা মূল্যে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মায়া রানির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সকল নিয়ম মেনে পুরাতন ভবন ভাঙ্গা হয়েছে। এছাড়া তিনি আরো জানান সকল নিয়ম মেনে পুরাতন ভবন এর মালামাল ও গাছ বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির অর্থ প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে জমা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা আগামী বুধবার জানাবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে জানতে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জিয়াউল হক কালাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনেক দাম্ভিকর সাথে জানান, সকল কিছু নিয়ম মেনে করা হয়েছে। মালামাল গুলো টেন্ডারে বিক্রি করা হয়েছে কিনা, নিলাম কমিটি গঠন করা হয়েছিল কিনা, প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি অকপটে জানান এসব কিছুই করা হয়নি। তবে সকল বিষয়ে রেজুলেশন করে একটি বিক্রয় কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারাই মূলত এর হিসাব রাখবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য মালামাল ও গাছ বিক্রির সমুদয় অর্থ রাখা হবে প্রতিষ্ঠানের চলতি একাউন্টে।। প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে সেটি জমা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা জানেন না বলেও জানান।
অপরদিকে এ বিষয়ে জানতে উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার ফরিদুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আইনের মধ্য দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান এগুলো করতে পারেন। তবে সেগুলো আইনের মধ্যে দিয়ে হতে হবে। এছাড়া সার্বিক বিষয়টি তার জানা নেই বলেও জানান।
উপজেলা বন কর্মকর্তা আহসান হাবীবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের গাছ কাটার বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। জানার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কে জানানো হবে।
সরেজমিন কালে কথা হয় পুরাতন ভবন ভাঙার রাজমিস্ত্রি বিপ্লব কুমার এর সাথে। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের পাঁচটি শ্রেণী কক্ষের ২০ থেকে ২৫ হাজার ইট, ৫ টি দরজা,৭টি জানালা, বিভিন্ন লোহা,টিন বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ টি গাছও বিক্রি করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অংশীদার হতে না পাওয়া ভুক্তভোগীরা ক্ষোভের সাথে জানান, একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র রেজুলেশনের মাধ্যমে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা? এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে এলাকার একাধিক জনগোষ্ঠী জানান, এগুলো সরকারি নিয়মের মধ্যে দিয়ে টেন্ডার দিলে আরো অনেক মূল্য পাওয়া যেত। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকার কারণে প্রতিষ্ঠান বেশি অর্থ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানানো হয়েছে।