ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ: দাঙ্গা-সহিংসতা বন্ধ করতে বললেন নিহত কিশোরের দাদি

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ: দাঙ্গা-সহিংসতা বন্ধ করতে বললেন নিহত কিশোরের দাদি

ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি জুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে চলছে দাঙ্গা ও সহিংসতা। এই পরিস্থিতিতে দেশে দাঙ্গা-সহিংসতা বন্ধ করে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের গুলিতে নিহত আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম কিশোর নাহেল এমের দাদি।

তিনি বলেছেন, নাহেলকে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে তার অবসান ঘটাতে হবে। সোমবার (৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম কিশোর নাহেলকে হত্যার ঘটনায় ফ্রান্সজুড়ে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ-সহিংসতা বন্ধ করে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের গুলিতে নিহত কিশোর নাহেল এমের দাদি।

গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের নানতেরেতে গাড়ির ভেতর নাহেল এম নামের ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরকে গুলি করেন এক পুলিশ সদস্য। এতে তার মৃত্যু হলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

- বিজ্ঞাপন -

এমনকি রাজধানী প্যারিসসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এছাড়া বিভিন্ন দোকানে লুটেপাটের ঘটনাও ঘটে।

সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে নানতেরেতে। এখানেই নাহেল এমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এমনকি বিক্ষোভের ৫ম দিনে রাজধানী প্যারিসের এক মেয়রের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা।

এছাড়া ভাঙচুর ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফ্রান্সজুড়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন শত শত মানুষ।

ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ: দাঙ্গা-সহিংসতা বন্ধ করতে বললেন নিহত কিশোরের দাদি
একটি গাড়ি উল্টে আছে। তার পাশ থেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন একজন পুলিশ সদস্য। ছবি রয়টার্স

এই পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেল এম-এর দাদি। ফরাসি মিডিয়ায় নাদিয়া নামে চিহ্নিত ওই নারী রোববার বিএফএমটিভিকে বলেছেন, ‘যারা এই মুহূর্তে আইন ভাঙছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন, আমি তাদের বলছি: এটা বন্ধ করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা (দাঙ্গা-সহিংসতার কাজে) নাহেলকে কেবল একটি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করছে।’

- বিজ্ঞাপন -

উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফলে রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে এমন অনেক আলজেরীয় বসবাস করছেন— যারা গত ৩ কিংবা ৪ প্রজন্ম ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক জিনেদিন ইয়াজিদ জিদানও একজন আলজেরীয় বংশোদ্ভূত ফ্রেঞ্চ।

তবে আলজেরীয় বংশোদ্ভূতদের অভিযোগ— ফ্রান্সের সরকার তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে এবং ফ্রান্সের মূল সমাজ সংস্কৃতি কখনও তাদেরকে মূল ফরাসি নাগরিকদের সম্মান দেবে না।

বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের এই বিক্ষোভ প্রকাশ পেয়ে থাকে। নাহেলের মৃত্যুর পর আরও একবার তা প্রবলভাবে বেরিয়ে এসেছে।

- বিজ্ঞাপন -

আল জাজিরা বলছে, উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফরাসি এই কিশোরকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য ভিডিওতে ধরা পড়েছে, আর এটিই পুলিশি সহিংসতা এবং বর্ণবাদ সম্পর্কে আলজেরীয় বংশোদ্ভূতদের দীর্ঘস্থায়ী অভিযোগগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।

ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ: দাঙ্গা-সহিংসতা বন্ধ করতে বললেন নিহত কিশোরের দাদি
আগুনের সামনে দাড়িয়ে আছেন একজন বিক্ষোভকারী। ছবি রয়টার্স

গত শনিবার নিহত কিশোরকে দাফন করার সময় পরিবারের প্রতি সমর্থন জানাতে কয়েক শতাধিক মানুষ প্যারিসের শহরতলিতে নানতেরের গ্র্যান্ড মসজিদে জড়ো হন। পরে টানা পঞ্চম রাতের মতো দাঙ্গাকারীরা দোকানপাটে হামলা ও ভাংচুর করে।

এসময় বিক্ষোভকারীরা গাড়ি ও বাস পুড়িয়ে দেয় এবং ফ্রান্সজুড়ে মোতায়েন করা ৪৫ হাজার পুলিশ সদস্যের সাথে হিংসাত্মক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে যত জন নিহত হয়েছে তার বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ বা আরব। আর এ বছর ফ্রান্সে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর এটা দ্বিতীয় ঘটনা।

এর আগে গত বছর ফ্রান্সে এভাবে রেকর্ডসংখ্যক মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

সহিংসতার শুরু যেভাবে

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের নানতেরে এলাকায় নাহেল এম নামের ওই তরুণ গত মঙ্গলবার গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বলে। কিন্তু সে না থামলে পুলিশ খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে।

ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ: দাঙ্গা-সহিংসতা বন্ধ করতে বললেন নিহত কিশোরের দাদি
একজন বিক্ষোকারী বসে আছে। পাশেই আছেন কয়েকজন বিক্ষোভকারী । ছবি এপি

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ অফিসার একটি গাড়ির চালকের দিকে বন্দুক তাক করে আছে। এরপর একটি গুলির শব্দ শোনা যায় এবং তারপর গাড়িটি থেমে যায়। বুকে গুলিবিদ্ধ নাহেলকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। গুলিবর্ষণকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে আটকও করা হয়।

ফরাসি মিডিয়ায় বলা হয়, পুলিশ প্রথমে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তরুণটি তাদের দিকেই গাড়িটি চালিয়ে দিয়ে পুলিশদের আহত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে ধারণা করা হয়, প্রকৃত ঘটনা ছিল ভিন্ন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার রাত থেকেই প্যারিস ও অন্য আরও কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়। গাড়ি ও বাসস্টপে আগুন দেওয়া হয়, কিছু রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়, হামলা করা হয় পুলিশ স্টেশনও। দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।

যে পুলিশ অফিসারের গুলিতে নাহেল মারা যান, তিনি তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছেকৃতভাবে খুনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম কিশোর নাহেলের মৃত্যু ফ্রান্সে বর্ণবাদ এবং সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের প্রতি পুলিশের বৈষম্যমূলক আচরণের ব্যাপারে ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। মূলত এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই পুরো ফ্রান্স সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!