খুঁজে পাওয়া টাইটানের ধ্বংসাবশেষে মানুষের ‘দেহাবশেষ’ পাওয়া গেছে
ডুবোযান টাইটানের ধ্বংসাবশেষে মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে বলে ধারণা করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ দেখতে আটলান্টিকের তলদেশে ডুব দেওয়ার পর ‘অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে’ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া টাইটানের কয়েকটি টুকরা উদ্ধারের পর বুধবার সেগুলো কানাডার সেইন্ট জন বন্দরে নিয়ে আসা হয়।
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ডুবোযানটির অবতরণ কাঠামো ও পেছনের কভারও মিলেছে বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
যেসবকে মানুষের দেহাবশেষ মনে করা হচ্ছে, মার্কিন বিশেষজ্ঞরা তা আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন, বিবৃতিতে বলেছে কোস্ট গার্ড।
ডুবোযানটি কেন ধ্বংস হয়েছে মার্কিন এ সংস্থাটি তার তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আরও পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাদের মেরিন বোর্ড অব ইনভেস্টিগেশন (এমবিআই) যাবতীয় নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বন্দরে পাঠাবে।
এমবিআইয়ের চেয়ার ক্যাপ্টেন জেসন নিউবয়ের এক বিবৃতিতে বলেছেন, কী কী কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে তা বুঝতে আরও অনেক কাজ বাকি আছে।
কানাডীয় উপকূলে আটলান্টিকের প্রায় ১৩ হাজার ফুট গভীরে পানির নিয়ে ঐতিহাসিক জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে।
১০০ বছরেরও বেশি আগে সেই ১৯১২ সালে নিজের প্রথম সমুদ্র যাত্রাতেই ডুবে যায় ওই সময়ের সর্ববৃহৎ জাহাজ টাইটানিক। মারা যায় দেড় হাজারের বেশি যাত্রী ও ক্রু।
ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেওয়া সেই টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের দেখাতে নিয়ে যেত ওশানগেইট নামে একটি পর্যটন সংস্থা। এজন্য জনপ্রতি আড়াই লাখ ডলার গুণতে হতো।
ওশানগেইটের ডুবোযান ছিল টাইটান। গত ১৮ জুন ডুব দেওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর পানির উপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজের সঙ্গে সেটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তারপর থেকেই টাইটানের অনুসন্ধানে সমুদ্রের বিশাল এলাকা জুড়ে অনুসন্ধান চলছিল।
কী কারণে টাইটান বিধ্বস্ত হয়েছে তা অনুসন্ধানে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের যৌথ তদন্তদল।
টাইটান সাবমার্সিবলে আরোহী হিসেবে ছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের, বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং (৫৮), পাকিস্তানের এংরো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ফরাসি পর্যটক পল অঁরি নারজিলে (৭৭) এবং ওশানগেইটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ (৬১)।
টাইটান হারিয়ে যাওয়ার পর সেটির অনুসন্ধানে সমুদ্রের তলদেশে প্রায় আড়াই হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সেটির অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হয়।
শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছেই টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় সাগরের তলদেশে পাঠানো একটি রিমোট অপারেটিং ভেহিকলও (আরওভি)।
তবে এই ধ্বংসাবশেষে মানুষের ‘দেহাবশেষ’ আদৌ মিলবে কিনা তা নিয়ে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা সন্দিহান ছিলেন।
এখন পর্যন্ত টাইটানিকের অগ্রভাগের কাছ থেকে ডুবোযান টাইটানের ৫টি বড় টুকরা উদ্ধার করা হয়েছে, জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।